28 C
Dhaka
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

বার বার বদলাচ্ছে কারিকুলাম; শিক্ষায় কী প্রভাব পড়ছে ?

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

আগের পরীক্ষাপদ্ধতি বাদ সহ বেশ কিছু পরিবর্তন এনে গত শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলাদেশে নতুন যে কারিকুলাম চালু হয়েছে তা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে দেশটিতে।

শিক্ষক ও অভিভাবকরা নতুন ওই কারিকুলাম নিয়ে উদ্বেগের কথা জানালেও সরকার বলছে, নতুন বিধায় এটি বুঝতে সময় লাগছে।

শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, নতুন এ পদ্ধতি বোঝার জন্য যে প্রশিক্ষণ দরকার তা সঠিকভাবে দেয়া হয়নি। এর ফলে পাঠ্যক্রম ও মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাই আছে অন্ধকারের মধ্যে।

অন্যদিকে নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতি পুরোপুরি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের পর এ নিয়ে আপত্তি তোলেন অভিভাবকরা।

তবে সরকার বলছে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ হিসেবে প্রস্তুত করতে এই উদ্যোগ তাদের।

বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, “আমরা মুখস্ত করার প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে এসে এক দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলতে এই শিক্ষাক্রম চালু করেছি। কিন্তু এটি নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা বেশি আসছে শহুরে বাবা-মায়েদের কাছ থেকে। সবাই এর বিরোধিতা করছে না।”

কিন্তু দফায় দফায় কারিকুলামে এরকম পরিবর্তনের ফলে শিক্ষার ওপর, শিক্ষার্থীদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?

বিতর্ক শুরু যেভাবে

গত বছর প্রাথমিকভাবে প্রথম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। চলতি বছর থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন পদ্ধতি।

অভিভাবকরা বলছেন, নতুন এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পর স্কুল থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলে গুগল ও ইউটিউব দেখে সেগুলো লিখে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সন্তানেরা।

রাজধানীর বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক রবিউল ইসলাম নামের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, “এভাবে ইন্টারনেট দেখে যখন আমার ছেলে এগুলো লিখছে, তাতে ওর কতটুকু লাভ হচ্ছে আমরা তো সেটা বুঝতেও পারি না।”

নতুন এই পদ্ধতি বুঝতে অনেকেই বুঝতে না পেরে অনেকে গাইড বইয়ের দিকে ঝুঁকছে বলে জানাচ্ছেন তারা।

শিক্ষকদের আপত্তি, নতুন এই পদ্ধতি চালুর আগে শিক্ষকদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। অথচ শিখন, শেখানো ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পুরোপুরি ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। বইয়ের বিষয়বস্তুতেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন।

বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা যারা পড়াচ্ছি, আমাদের কাউকে কাউকে নামমাত্র একটা প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান করতে। আমাদের অবস্থা হয়েছে ঢাল তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সর্দারের মতো। প্রশিক্ষণ ছাড়াই যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে।”

শিক্ষাবিদরা বলছেন, একদম তাড়াহুরো করে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। যে কারণে এই পদ্ধতি বুঝে উঠতে পারছে না শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “হঠাৎ করেই এমন একটা পদ্ধতি চালু না করে আরো পাইলটিং করে নতুন কারিকুলাম চালু করা হলে এত প্রশ্ন ও সমালোচনা তৈরি হতো না।”

মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে যেসব আপত্তি

নতুন শিক্ষাক্রমের যেসব বিষয় নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মূল্যায়ন পদ্ধতি।

বিশ্বের বেশ কিছু দেশের আদলে সাজানো হয়েছে নতুন শিক্ষাব্যবস্থাকে। এতে পাঠ্যবই, পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন।

এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক শিখনকালীন মূল্যায়ন। অর্থাৎ সারা বছর শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে আগের মতো পরীক্ষা হচ্ছে না।

নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেয়া হয়। পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায়।

নতুন শিক্ষাক্রমে নিয়ে অভিভাবকদের একটি অংশ মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন শুরু থেকে। গত বছর মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হয়।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মি. দুলু বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আগে যেমন নম্বর দিয়ে মূল্যায়ন ছিল। তখন শিক্ষার্থীরা বাসায় পড়াশোনায় আগ্রহী হতো। তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা থাকতো। এখন এসব না থাকায় বাসায় আর শিক্ষার্থীরা পড়তে আগ্রহী হচ্ছে না। তাহলে ওরা কী শিখবে?”

নতুন পদ্ধতি পরীক্ষা বা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ৬৫ শতাংশ লিখিত এবং ৩৫ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক রাখার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি প্রথমে ছিল না। নানা সমালোচনার পর গত পহেলা জুলাই এটি নেয়া হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম প্রবর্তনের ক্ষেত্রে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “পরীক্ষা নির্ভর ও মুখস্ত নির্ভরতার কারণে আমাদের শিখন অর্জন হচ্ছিলো না। শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যায়ন পদ্ধতি দীর্ঘস্থায়ী কিছু নয়। বিশ্ব পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাপদ্ধতির ধরনও বদলে যায়। সে কথা বিবেচনা করেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।”

তবে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবকদের আপত্তির মুখে একটি কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এপ্রিলের শেষদিকে ওই কমিটি একটি প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে। যেখানে কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষারও সুপারিশ করেছে।

একই সাথে স্কুল ভিত্তিক ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়নে একই পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত করারও সুপারিশ করেছে ঐ কমিটি।

কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ খালেদ রহীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা আমাদের সুপারিশগুলো মন্ত্রণালয়কে জমা দিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরবর্তী তাদের কাজ করবে।”

কমিটির যে সুপারিশ করেছে সেখানে বলা হয়েছে, পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হলেও আগের মতো মুখস্থ করে উত্তর দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

ওই সুপারিশে বলা হয়েছে, একেকটি বিষয়ে দুই ঘণ্টার মতো লিখিত পরীক্ষা হতে পারে। বাকি তিন ঘণ্টা সময় কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য বরাদ্দ থাকবে।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

শেখ হাসিনা ফিরে এলে জনগনই ব্যবস্থা নিবে- বিএনপি মহাসচিব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ফ্যাসিবাদী চরিত্র নিয়ে শেখ হাসিনা আবারো ফিরে...