Your Ads Here 100x100 |
---|
নুর রাজু, আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদগামী ট্রেনটি হঠাৎ গতি কমিয়ে ফেলতেই বিপদের প্রথম আভাস পেয়েছিলেন পিটার হিউজ। ট্রেনের টিভি মনিটর ও আলো নিভে যায়, চালু হয় জরুরি লাইট, যা বেশিক্ষণ টিকেনি। এরপর ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।
চার ঘণ্টা পরও তিনি মাদ্রিদ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ট্রেনেই আটকে ছিলেন। খাবার ও পানি থাকলেও টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
“অন্ধকার নামছে, আমরা আরও অনেকক্ষণ আটকে থাকতে পারি,” বিবিসিকে বলেন হিউজ।
এই বিপর্যয় শুধু হিউজের ট্রেনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে শুরু হওয়া ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটে স্পেন ও পর্তুগালের বিশাল অংশ অচল হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে আন্দোরা ও ফ্রান্সের কিছু এলাকাতেও।
সিগনাল বাতি নিভে যায়, মেট্রো বন্ধ হয়ে যায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়ে এবং ব্যাংক কার্ডে লেনদেন না হওয়ায় নগদ টাকার জন্য লাইন ধরেন সাধারণ মানুষ।
জনাথন এমেরি নামের এক যাত্রী সেভিয়া ও মাদ্রিদের মাঝামাঝি এক ট্রেনে ছিলেন। ট্রেনের দরজা বন্ধ থাকায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করতে হয়। পরে লোকজন দরজা খুলে হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা করেন। অর্ধঘণ্টা পর ট্রেন ত্যাগ করলেও কোথাও যাওয়ার উপায় ছিল না।
স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা এসে খাবার ও পানি সরবরাহ করতে থাকেন। “কেউ কোনো কিছুর দাম নিচ্ছেন না। খবর ছড়িয়ে পড়েছে বলেই হয়তো অনবরত মানুষ আসছে,” বলেন এমেরি।
মাদ্রিদের মেট্রো স্টেশনে ব্ল্যাকআউটের সময় যাত্রীরা হিমশিম খায়। সারা জোভোভিচ নামের এক যাত্রী বলেন, “সবাই আতঙ্কে আর হিস্টোরিয়ায় পড়ে গিয়েছিল। পুরো পরিবেশটাই ছিল বিশৃঙ্খল।”
মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। বাইরে বেরিয়ে যানজটের মুখে পড়েন তিনি।
স্পেনের রাজধানীতে গ্রোসারি শপিংয়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় হতবাক হন হান্না লাউনি। “পুরো দেশই বন্ধ হয়ে গেছে—এমনটা আগে কখনও দেখিনি,” বলেন তিনি।
বেনিডর্মের এক হোটেলে মধ্যাহ্নভোজরত মার্ক ইংল্যান্ড বলেন, “হঠাৎ সব বন্ধ হয়ে যায়, ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে, ফায়ার ডোর বন্ধ হয়ে যায়।”
লিসবনের একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষিকা এমিলি থোরোগুড বলেন, বিদ্যুৎ কয়েকবার আসা-যাওয়ার পর সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি অন্ধকারেই পাঠদান চালিয়ে যান, যদিও অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে নিয়ে যান।
লিসবনে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিক উইল ডেভিড বলেন, তিনি যখন দাড়ি কাটাচ্ছিলেন তখন বিদ্যুৎ চলে যায়। পরে জানালার পাশে বসিয়ে কাঁচি দিয়ে কাজ শেষ করেন নাপিত।
“ট্রাফিক লাইট না থাকায় রাস্তায় বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়। অনেকেই কর্মস্থলের বাইরে দাঁড়িয়ে কিছু না করে সময় কাটাচ্ছিলেন,” জানান তিনি।
মোবাইল নেটওয়ার্কও প্রথম দিকে কাজ করছিল না, ফলে অনেকে তথ্য জানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
কপি রাইটার এলোয়িজ এজিংটন বার্সেলোনায় কাজ করতে পারেননি। ফোনে শুধু মাঝে মাঝে বার্তা আসছিল, ওয়েব পেজ খুলছিল না, ব্যাটারি সাশ্রয়ে চেষ্টা করছিলেন।
স্পেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ফোর্টুনার এক বাসিন্দা জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দেড় ঘণ্টা পরও তার স্বামী জেনারেটরের জন্য তেল খুঁজতে বের হন।
“আমরা চিন্তিত খাবার, পানি, নগদ অর্থ ও জ্বালানি নিয়ে—যদি পরিস্থিতি কয়েকদিন স্থায়ী হয়,” বলেন ১১ বছর ধরে স্পেনে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিক লেসলি।
মালাগায় স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ ফিরে আসে। বিকেল ৫টার মধ্যে স্পেনের জাতীয় গ্রিড অপারেটর জানায়, দেশটির উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
তবে পর্তুগালের বিদ্যুৎ কোম্পানি REN জানায়, পুরোপুরি পুনরুদ্ধারে এক সপ্তাহও লাগতে পারে।
এরপর স্পেনজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ সহায়তার আবেদন করতে পারে।
সন্ধ্যার দিকে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ জানান, দেশটির অর্ধেক এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরেছে, REN জানিয়েছে ৭.৫ লক্ষ গ্রাহক বিদ্যুৎ ফিরে পেয়েছে। তবে বহু এলাকা এখনো অন্ধকারে ডুবে আছে।
তথ্যসুত্রঃ বিবিসি নিউজ