Your Ads Here 100x100 |
---|
বিনোদন ডেস্ক :
হত্যাচেষ্টা মামলায় চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চের ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এ তালিকায় রয়েছেন সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ আরও অনেকে। গত সোমবার আদালত এ মামলার আবেদন গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরদিন মঙ্গলবার ঢাকার রমনা থানায় মামলা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হয়।
একই দিন শিল্পী সিদ্দিককে হামলার পর জনতার হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “এভাবে ধারাবাহিকভাবে মামলা দায়েরের প্রবণতা রুখতে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এসব অনভিপ্রেত মামলার বিপরীতে কঠোর অবস্থান নেওয়া।”
আজাদ আবুল কালাম প্রশ্ন তোলেন, “সুবর্ণা মুস্তাফার মতো একজন গুণী শিল্পী রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষকে গুলি করবেন—এটা কেমন কথা? যে ব্যক্তি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু মামলার তালিকায় শত শত নাম, যার মধ্যে অনেকেই সশস্ত্র সহিংসতায় যুক্ত ছিলেন না। এমন পরিস্থিতি অবাস্তব এবং বিভ্রান্তিকর।”
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বেশ কয়েকজন শিল্পী বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন—এই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আজাদ বলেন, “কারও রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা থাকতেই পারে। শিল্পীরা তো সব সময়ই মানুষের পক্ষে কথা বলেন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে, মিছিলে অংশ নিয়ে, তারা তো গণমানুষের চেতনার সঙ্গেই থেকেছেন। অথচ এখন তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মামলা দিয়ে সমাজে হেয় করা হচ্ছে। এটা একধরনের অস্বাভাবিক সংস্কৃতি। ইরেশ যাকেরের মতো একজন শিল্পীও মামলায় জড়ালেন, যিনি জুলাই মাস থেকেই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।”
তিনি আরও বলেন, “হত্যাচেষ্টা মামলার মতো গুরুতর অভিযোগে শিল্পীদের নাম থাকা মানে সরাসরি তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা। অথচ কার কী আর্থিক সামর্থ্য আছে, তা আমরা নিজেরাই জানি। এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে যেন শিল্পীরা অর্থের জোগান দিয়ে মানুষ খুন করছেন। রাষ্ট্রের উচিত হবে এসব ভিত্তিহীন মামলার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেওয়া। যদি প্রমাণিত হয় শিল্পীরা গুলি করেননি, তাহলে যারা মিথ্যা মামলা করেছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান থাকা প্রয়োজন।”
সিদ্দিককে ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রসঙ্গে আজাদ বলেন, “এটা স্পষ্টতই মব ভায়োলেন্স। কিছু লোক দলবদ্ধভাবে একজন শিল্পীকে রাস্তায় হেনস্তা করে, আঘাত করে, জামাকাপড় খুলে ফেলে থানায় সোপর্দ করে। যদি থানায় হস্তান্তরই উদ্দেশ্য ছিল, তাহলে নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিল কেন? এই মব জাস্টিস আমাদের সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে। সরকারকে অবশ্যই এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।”
সবশেষে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “কাউকে অপরাধী ঘোষণা করার আগে তার অপরাধ প্রমাণ হওয়া জরুরি। শুধু শিল্পী নয়, সাধারণ মানুষের প্রতিও এই ন্যায্যতা থাকা উচিত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মামলা করে সামাজিকভাবে কাউকে হেয় করাটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এই মানসিকতা সমাজে বিভক্তি আরও বাড়াবে। অথচ আমরা যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখছিলাম, গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছিল, এসব ঘটনা সেই চেতনার পরিপন্থী।”