Your Ads Here 100x100 |
---|
নুর রাজু, স্টাফ রিপোর্টার
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধ আজ ৬০ দিনে গড়িয়েছে, এমন সময় যখন দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের মানবিক দায়িত্ব নিয়ে শুনানির তৃতীয় দিন পার করছে।
গত ২ মার্চ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় কোনো খাদ্য, পানি কিংবা চিকিৎসাসামগ্রী প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এর কয়েক দিন পর, ১৮ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও বোমাবর্ষণ ও স্থল হামলা শুরু করে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত এসব হামলায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫২,০০০’রও বেশি ফিলিস্তিনি।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে “সম্পূর্ণ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি” বিরাজ করছে এবং এ মানবিক বিপর্যয় রোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, গাজায় তাদের সব বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে এবং সংস্থাটির হাতে থাকা খাদ্য মজুত সম্পূর্ণ শেষ।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক দপ্তর (ওসিএইচএ)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতির সময় যেসব জরুরি খাদ্য মজুত করা হয়েছিল, ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়ায় সেগুলো অনেকেই ফেলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অধিকাংশ বাসিন্দা এখন নিজেরা রুটি তৈরি করতেও অক্ষম, কারণ তীব্র জ্বালানির সংকট ও আকাশচুম্বী ময়দার দাম তাদের সেই সক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে।
প্রতিবেদনটি আরও জানায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৭০ শতাংশ এলাকা ‘নো-গো জোন’ ঘোষণা করায় কৃষক ও খামারিরা নিজেদের জমিতে যেতে পারছেন না, ফলে মানুষ এখন পুরোপুরি সহায়তার উপর নির্ভরশীল।
এদিকে, গাজার অবশিষ্ট সুপ কিচেনগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, সহায়তা না এলে তারা কয়েক দিনের মধ্যেই কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হবে।

দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, পরিবারগুলো এখন এমন কিছু খাওয়ার চেষ্টা করছে যা খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়, কেবল বেঁচে থাকার তাগিদেই।
একই সময়ে, ডব্লিউএফপি-র একজন মুখপাত্র আল জাজিরা আরবিকে বলেছেন, “সহায়তাবাহী ট্রাকগুলো সীমান্তে আটকে রয়েছে, গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।”
এনজিও মার্সি কর্পস জানিয়েছে, গাজায় পণ্যের মূল্য ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে এবং সীমান্ত খুলে না দিলে এখানকার খাদ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে।
বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইপিসি ইতোমধ্যে গাজায় খাদ্যাভাব ও অপুষ্টি বিষয়ে বিশ্লেষণ শুরু করেছে। ওসিএইচএ বলছে, ২৮ এপ্রিল শুরু হওয়া এই মূল্যায়নে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার ৫০ জনের বেশি প্রশিক্ষিত বিশ্লেষক অংশ নিয়েছেন।
গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসরায়েল প্রথম থেকেই এই দুর্ভিক্ষের বিষয়ে আইপিসির একাধিক সতর্কবার্তা পেয়েছে।
হাসপাতালগুলোতেও প্রচণ্ড চাপ বিরাজ করছে। আহত ও রোগীর চাপ সামাল দিতে না পেরে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, চিকিৎসাসামগ্রীর অভাবে অনেকে ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছেন। আল জাজিরার গাজা সিটি প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানান, “সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধও এখানে পাওয়া যাচ্ছে না।”
অন্যদিকে, দ্য হেগে আইসিজেতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছে, ইসরায়েলের নিরাপত্তার স্বার্থে তারা ইউএনআরডব্লিউএর সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য নয়।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত বর্তমানে এক সপ্তাহব্যাপী শুনানি করছে, যেখানে আলোচনা হচ্ছে—গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েল কী পদক্ষেপ নেবে। এই শুনানি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক পরামর্শমূলক মতামতের অনুরোধের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।