Your Ads Here 100x100 |
---|
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্প্রতি বাণিজ্যিক বিধিনিষেধের পাল্টাপাল্টি আরোপের মধ্য দিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন চরমে পৌঁছেছে। স্থানীয় শিল্প রক্ষার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করলে, তার আগে ভারত হঠাৎ করে বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এই পদক্ষেপ দুটি দুই দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
বাংলাদেশের পোশাক খাত ভারতীয় সুতার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সুতা আমদানির এক-তৃতীয়াংশ এসেছিল। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ায় এখন সমুদ্র ও আকাশপথে পণ্য আনতে হচ্ছে, যা সময় ও ব্যয়ে বেশি। সাপ্লাই চেইন ফার্ম এমজিএইচ গ্রুপের প্রধান আনিস আহমেদ বলেন, “যেখানে এক সপ্তাহে পণ্য পৌঁছত, এখন তা আট সপ্তাহ সময় নিচ্ছে।”
২০২৪ সালের আগস্টে বিক্ষোভের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারান এবং ভারতে নির্বাসিত হন। বর্তমানে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও অর্থপাচারের অভিযোগে বাংলাদেশ প্রত্যর্পণের দাবি জানালেও, দিল্লি এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরের বক্তব্য, যেখানে তিনি বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্ব তুলে ধরেন, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য “সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক” মন্তব্য, দিল্লিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের কৌশলগত শিলিগুড়ি করিডোর ঘিরে চীনের প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
ভারত বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা নিয়ে নিয়মিত সমালোচনা করছে। বাংলাদেশ দাবি করছে, এ ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একই সঙ্গে ভারত তার ভিসা নীতিও কঠোর করেছে, যার ফলে বাংলাদেশিদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। বছরে ২০ লাখ বাংলাদেশি ভারতে যেতেও পারছিলেন না।
সম্প্রতি পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফর এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার ইঙ্গিত ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও বর্তমান সরকারের এই যোগাযোগ প্রশ্ন তুলেছে দিল্লিতে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, উত্তেজনা প্রশমনে ব্যর্থ হলে তা বাণিজ্য, সংযোগ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব ও পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।