25 C
Dhaka
শুক্রবার, মে ২, ২০২৫

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভুল তালিকায় হংকং ব্যবসায়ী, লাখ ডলারের ক্ষতি

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

হংকংয়ে ২৫ বছর ধরে দরজার লক ও হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করা ডরিস আও হঠাৎই তার ব্যাংক, ডিবিএস গ্রুপের কাছ থেকে একটি চিঠি পান। ২০২৩ সালের জুনে পাঠানো সেই চিঠিতে জানানো হয়, তার ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে। ব্যাখ্যা না দিয়েই অ্যাকাউন্টটি পরবর্তীতে জব্দ করা হয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের সঙ্গে তার বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।

অনলাইনে অনুসন্ধান করে আও জানতে পারেন, তার কোম্পানির নামের মতো আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটি রাশিয়ার সামরিক খাতকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে নিষিদ্ধ হয় এবং তালিকাভুক্ত ঠিকানার একটি ছিল আও’র গুদাম।

“আমরা সেই কোম্পানি নই। এটা সম্পূর্ণ ভুল,” বলেন আও, তার গুদামে দাঁড়িয়ে, যেখানে নামকরা ব্র্যান্ডের লক, হিঞ্জ এবং স্লাইডিং ডোর কিট স্তূপ করে রাখা।

এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বাস্তব উদাহরণ, যেখানে চীনের প্রযুক্তি অ্যাক্সেস সীমিত করতে আরও বেশি কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় বারবার তথ্যগত ভুল দেখা যাচ্ছে।

ভুলে ঠাসা তালিকা

রয়টার্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রায় ১০০টি চীনা ও হংকং কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে, তার অন্তত এক-চতুর্থাংশ, অর্থাৎ ২৬টি এন্ট্রিতে ভুল নাম, ভুল ঠিকানা বা পুরোনো তথ্য রয়েছে।

রয়টার্স প্রতিনিধিরা এসব ঠিকানায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন, অনেক জায়গাতেই কালো তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির অস্তিত্ব নেই। কোথাও ছিল বিউটি স্যালন, কোথাও কোচিং সেন্টার, আবার কোথাও ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরনো কারখানার ধ্বংসাবশেষ।

তবে কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ প্রযুক্তি লেনদেনের প্রমাণও মিলেছে। জাল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জকে বাড়িয়ে তুলছে।

বিভ্রান্তির শিকার ব্যবসায়ীরা

এই তালিকা পরিচালনা করে ইউএস কমার্স ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি (BIS)। প্রাক্তন পাঁচ মার্কিন কর্মকর্তার মতে, ভুল এন্ট্রি যাচাই বা সংশোধনে জনবল ও সম্পদের অভাব রয়েছে। তাদের ভাষায়, BIS “চরমভাবে অপ্রতুলভাবে রিসোর্সযুক্ত।”

চীনা ও রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জোরদারের প্রক্রিয়ায় কোম্পানিগুলো প্রায়ই ঠিকানা ও নাম বদল করে ফেলে, বলে জানান সদ্য অবসর নেওয়া BIS কর্মকর্তা ম্যাথিউ বোর্মান।

BIS এ সম্পর্কিত কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিবিএস ব্যাংকও ডরিস আও’র বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।

‘ছায়া কোম্পানি’র আবরণে বাণিজ্য

রয়টার্সের তথ্যে উঠে এসেছে, যেসব ঠিকানায় কোম্পানিগুলোর নাম ছিল, তার অর্ধেকের বেশি ছিল কম্পানি সেক্রেটারিয়াল (COMSEC) ফার্ম, যেগুলো চীনা বা বিদেশি নাগরিকদের জন্য ঠিকানা সরবরাহ করে। অনেক ঠিকানায় পুরনো কোম্পানির মেইল পড়ে ছিল বা ভবনগুলো ছিল জরাজীর্ণ।

এই ভুলের কারণে অনেক ব্যাংকও অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে ওঠে। হংকংয়ের এক বিউটি স্যালনের মালিক ক্রিস্টাল এনজি জানান, তার ঠিকানা ভুলবশত কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় HSBC ও দা সিং ব্যাংক তার অ্যাকাউন্ট আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।

আসল দোষী, নাকি ছায়া?

ডরিস আও’র কোম্পানির নাম “Win Key (China-Hong Kong) Limited” দেখতে প্রায় হুবহু মিলে যায় “Win Key Ltd”-এর সঙ্গে, যেটি BIS এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। তবে রাশিয়ায় রপ্তানিকৃত পণ্যের যে পরিসংখ্যান রয়টার্স পর্যালোচনা করেছে, তাতে ডরিস আও’র গুদাম থেকে কোনো কিছু রপ্তানি হয়নি।

Win Key Ltd নামক কোম্পানিটি ইতোমধ্যেই হংকংয়ে বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু এর ছায়া এখনো তাড়া করে বেড়াচ্ছে ডরিস আও-কে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লিস্টে নাম উঠে যাওয়ার পর থেকে কোনো বিদেশি সরবরাহকারী বা কুরিয়ার সেবা তার ঠিকানায় পণ্য পাঠাতে রাজি নয়। এতে তার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ডলারের বেশি।

BIS জানিয়েছে, তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করা যায়। আও আবেদন করলেও এখনও পর্যন্ত তা নিষ্পত্তি হয়নি।

একজন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এই তালিকা থেকে বের হওয়া যেন ‘Hotel California’র মতো—“চেক-ইন করা যায়, কিন্তু বের হওয়া যায় না।”

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও দলীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের

নিউজ ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শুক্রবার রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে আয়োজিত...