25 C
Dhaka
শুক্রবার, মে ২, ২০২৫

অষ্টাদশ শতাব্দীর ‘এয়ার-ড্রায়েড চ্যাপলেইন’: রহস্যময় মমির পরিচয় ও সংরক্ষণের কৌশল উন্মোচিত

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

অস্ট্রিয়ার ডানিউব নদীর উত্তরের এক দূরবর্তী পাহাড়ি গ্রামের গির্জার গোরস্থানের গোপন কক্ষে বহুদিন ধরে সংরক্ষিত একটি মানুষের মমি ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে চলে আসছিল নানান কল্পকাহিনি ও জল্পনা-কল্পনা।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই মমি ১৮শ শতাব্দীর এক পাদ্রির দেহাবশেষ, যিনি একটি সংক্রামক রোগে মারা যান। মৃত্যুর কয়েক বছর পর তাঁর দেহ পুনরুদ্ধার করে গির্জার (St. Thomas am Blasenstein) কcrypt-এ স্থানান্তর করা হয়।

আশ্চর্যজনকভাবে অবিকৃত এই দেহ—যার ত্বক ও টিস্যু প্রায় অক্ষত অবস্থায় ছিল—প্রথম থেকেই তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করত, অনেকে বিশ্বাস করতেন দেহটি অলৌকিকভাবে রোগ নিরাময় করতে পারে।

তবে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় মমিটির সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে নতুন সব তথ্য, যা দীর্ঘদিনের রহস্যকে আরও ঘনীভূত করে তুলেছে। একটি এক্স-রে স্ক্যানে দেহের মধ্যে একটি বুলেট আকৃতির বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়, যা অনেককে বিষ প্রয়োগে হত্যার আশঙ্কা করতে বাধ্য করে।

তবে সম্প্রতি ক্রিপ্টে পানি ঢুকে পড়ায় সংস্কার কাজ শুরুর সুযোগে গবেষক দল মমিটিকে পরীক্ষা করে দেখে এক যুগান্তকারী অনুসন্ধান চালান। গবেষণার নেতৃত্ব দেন জার্মানির মিউনিখের লুডউইগ-ম্যাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস নেরলিখ।

তিনি বলেন, “আমরা মমিটিকে কয়েক মাসের জন্য সংগ্রহ করি এবং আমাদের বিশেষজ্ঞ দল আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বিশ্লেষণ করে। একই সময় গির্জায় সংস্কারকাজও চলতে থাকে। এটা দুই পক্ষের জন্যই লাভজনক ছিল।”

সিটি স্ক্যান, রেডিওকার্বন ডেটিং এবং দেহ ও হাড়ের রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষকরা নিশ্চিত হন, এই মমি ছিলেন ফ্রানৎস জাভের সিডলার ভন রোজেনেগ নামে এক অভিজাত, যিনি এক সময় সন্ন্যাসী ছিলেন এবং পরে St. Thomas am Blasenstein গির্জার পালপাদ্রী (vicar) হিসেবে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর মৃত্যু হয় ১৭৪৬ সালে, মাত্র ৩৭ বছর বয়সে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেহটি কখনো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়নি। বরং সম্ভবত তার ‘মূল সন্ন্যাস গির্জায়’ ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল, কিন্তু কোনো অজানা কারণে দেহটি সেখানেই থেকে যায়।

বিস্ময়করভাবে তাঁর পেট ও পেলভিক গহ্বর পূর্ণ ছিল ফার ও স্প্রুস গাছের কাঠের টুকরো, লিনেন, হেম্প ও সূক্ষ্ম নকশাদার ফ্ল্যাক্স কাপড় দিয়ে। রাসায়নিক বিশ্লেষণে জিঙ্ক ক্লোরাইডসহ বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতিও ধরা পড়ে।

নেরলিখ বলেন, “এটি ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত, কারণ দেহের বাইরের অংশ ছিল অক্ষত। আমাদের অনুমান, এই উপাদানগুলো পায়ুপথ দিয়ে ভেতরে ঢোকানো হয়েছিল।”

এই অনন্য সংরক্ষণ কৌশল প্রাচীন মিশরের প্রচলিত মমি সংরক্ষণের পদ্ধতির চেয়ে ভিন্ন, যেখানে শরীর চিরে অঙ্গ বের করা হয়। এর আগে এই ধরনের প্রক্রিয়া বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কখনও নথিভুক্ত হয়নি।

গবেষকদের মতে, কাঠের টুকরো ও কাপড় পানি শোষণ করত এবং জিঙ্ক ক্লোরাইড ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে শুকনো পরিবেশ তৈরি করত। এ কারণে দেহটি এতদিন ধরে প্রাকৃতিকভাবে ‘এয়ার-ড্রায়েড’ অবস্থায় টিকে ছিল।

রেডিওকার্বন পরীক্ষায় দেহটির মৃত্যুকাল ১৭৩৪ থেকে ১৭৮০ সালের মধ্যে বলে জানা যায়, যা ঐতিহাসিক তথ্যে উল্লেখিত সিডলারের মৃত্যুর সময়ের সঙ্গে মিলে যায়।

দেহের হাড় থেকে সংগৃহীত আইসোটোপ বিশ্লেষণে ধরা পড়ে, তিনি উচ্চমানের শস্য ও প্রচুর মাংসভিত্তিক খাদ্য গ্রহণ করতেন—যা সেই সময়ের একজন গ্রামীণ পালপাদ্রির খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তবে জীবনের শেষদিকে যুদ্ধজনিত খাদ্যসংকটে তিনি ভুগেছিলেন বলে গবেষকেরা মনে করছেন।

আন্তরিকভাবে ধর্মকর্মে নিয়োজিত এই পালপাদ্রির মৃত্যুর কারণ বিষক্রিয়া নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি যক্ষ্মা, যা ফুসফুসে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

তাঁর শরীরে পাওয়া বুলেট-আকৃতির কাঁচের বস্তুটি সম্ভবত একটি রোসারির দানা, যা মমি বানানোর সময় ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল বলে ধারণা।

গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে Frontiers in Medicine জার্নালে, যেখানে বিজ্ঞানীরা প্রাচীন দেহ সংরক্ষণের এক নতুন মাত্রার আবিষ্কার তুলে ধরেছেন।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও দলীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের

নিউজ ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শুক্রবার রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে আয়োজিত...