Your Ads Here 100x100 |
---|
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে ছয়টি ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে দেশের ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম রিউমর স্ক্যানার। একইসঙ্গে পুরো সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে মোট ১৬টি বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে বলে তাদের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়েও ৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া মোট ২৯৬টি ভুল তথ্য চিহ্নিত করেছে রিউমর স্ক্যানার। মাসব্যাপী ফ্যাক্টচেক কার্যক্রমের পাশাপাশি গাজায় চলমান গণহত্যা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে পুরোনো গুজবের পুনরাবৃত্তি এবং রাজনৈতিক অপতথ্যের নতুন কৌশল নিয়ে ব্লগস্পটের ফ্রি ডোমেইন ব্যবহার বিষয়ক পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। আগের মাস মার্চে শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যের সংখ্যা ছিল ২৯৮।
রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এপ্রিলে ফ্যাক্টচেক বিশ্লেষণে দেখা যায়, জাতীয় বিষয়ে সবচেয়ে বেশি—মোট ১০১টি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, যা মোট ভুল তথ্যের প্রায় ৩৪ শতাংশ। এরপর রয়েছে রাজনৈতিক বিষয়ে ৯৫টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ৩৮টি, ধর্মীয় বিষয়ে ২৭টি, প্রতারণা সম্পর্কিত ১০টি, খেলাধুলা বিষয়ে ৯টি, বিনোদন ও সাহিত্য ৮টি, এবং শিক্ষা বিষয়ে ৭টি ভুল তথ্য।
তথ্যের ধরন অনুসারে বিশ্লেষণে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে তথ্যভিত্তিক বিভ্রান্তি ছিল সর্বাধিক—১৩৮টি। ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল তথ্য ১০৫টি এবং ছবি কেন্দ্রিক ভুল ৫৩টি। এসব ভুল তথ্যের মধ্যে ১৭৯টি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, ৬৬টি বিভ্রান্তিকর এবং ৪৮টি বিকৃত তথ্য। এছাড়া ৩টি ঘটনা ছিল হাস্যরসাত্মক (সার্কাজম) অথচ সেগুলোকে বাস্তব বলে দাবির প্রেক্ষিতে যাচাই করা হয়েছে।
মাধ্যম হিসেবে এপ্রিলে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি—২৭৬টি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। ইউটিউবে ৫৪টি, ইনস্টাগ্রামে ৪৮টি, এক্সে (সাবেক টুইটার) ৪৪টি, টিকটকে ২৪টি এবং থ্রেডসে অন্তত ১৩টি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমও বাদ পড়েনি—১৫টি ঘটনায় একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে বলে রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে।
গত এক বছর ধরেই ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ঘিরে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বেড়েছে। এপ্রিল মাসেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। ভারতীয় গণমাধ্যমে অন্তত দুইটি ঘটনায় এবং ভারতীয় ফেসবুক পেজ বা অ্যাকাউন্ট থেকে আরও দুইটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। শুধু তাই নয়, সাম্প্রদায়িক অপতথ্য ছড়ানোর প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে। এপ্রিল মাসে এমন অন্তত ১৬টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি ছিল ভারতীয় পরিচয়ধারী একাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচারিত।
রিউমর স্ক্যানার বলছে, গেল মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জড়িয়ে ১২টি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৮৩ শতাংশ ছিল সরকারবিরোধী। সরকারের পক্ষে প্রচারিত ভুল তথ্যকে তারা ‘ইতিবাচক’ এবং সরকারের বিপক্ষে প্রচারিত তথ্যকে ‘নেতিবাচক’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি—২৯টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যার ৮৩ শতাংশই ছিল নেতিবাচক। উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. আসিফ নজরুলকে ঘিরে তিনটি (সবগুলোই নেতিবাচক), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ঘিরে দুটি (একটি নেতিবাচক), সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে ঘিরে দুটি (সব নেতিবাচক), আ ফ ম খালিদ হোসেন, শেখ বশিরউদ্দীন এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম—এই তিনজনকে ঘিরে একটি করে নেতিবাচক ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে বিএনপিকে ঘিরে—মোট ১৩টি, যার সবই নেতিবাচক। এর মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ঘিরে একটি, তারেক রহমানকে ঘিরে দুটি (একটি নেতিবাচক), এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ঘিরে নয়টি (সব নেতিবাচক) তথ্য ছড়ানো হয়। ছাত্রদল ও যুবদলকে ঘিরেও একাধিক বিভ্রান্তিকর তথ্য চিহ্নিত হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ছয়টি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ঘিরে ছয়টি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, যেগুলোর সবই নেতিবাচক। অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে নিয়ে ছয়টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যার ৭৫ শতাংশই ছিল ইতিবাচক। শেখ হাসিনাকে ঘিরে ছয়টি, যার মধ্যে ৮৩ শতাংশই সরকার পক্ষে প্রচারিত। ছাত্রলীগ ও যুবলীগকেও ঘিরে কিছু তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে ঘিরেও এপ্রিল মাসে তিনটি নেতিবাচক অপতথ্য ছড়ানো হয়। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম এবং নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
এপ্রিল মাসজুড়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও ভুল তথ্যের টার্গেট হয়। সেনাপ্রধানসহ সেনাবাহিনীকে ঘিরে ১৬টি এবং পুলিশকে ঘিরে ৯টি বিভ্রান্তিকর তথ্য শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া কোটা আন্দোলনের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এর মুখপাত্র উমামা ফাতেমাকে নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হয়েছে।
এপ্রিল মাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্টের সংখ্যা ছিল ১৯টি এবং ডিপফেক ভিডিও ছিল তিনটি। গাজায় চলমান পরিস্থিতি ঘিরে অন্তত ৩৮টি, কাশ্মীর হামলা ঘিরে ১১টি এবং ঢাকার সুন্নী মহাসমাবেশ ঘিরে ৫টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়।
গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে দেশি-বিদেশি ২৫টি সংবাদমাধ্যমকে ঘিরে ৬২টি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়। এসবের মধ্যে যমুনা টিভির নাম সবচেয়ে বেশি (১২ বার) ব্যবহার হয়েছে। এরপর প্রথম আলো ও জনকণ্ঠ—উভয়টির নাম ৮ বার করে ব্যবহার করা হয়েছে।