Your Ads Here 100x100 |
---|
নিউজ ডেস্ক :
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সম্প্রতি প্রকাশিত একটি তথ্যচিত্রে তুলে ধরেছে শেখ হাসিনার শাসনামলের পতনের পটভূমি, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ। ‘Rebuilding Bangladesh: Democracy After Sheikh Hasina’ শিরোনামে তথ্যচিত্রটি সম্প্রচারিত হয় শুক্রবার (২ মে)। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান এবং সরকারের দমন-পীড়নের শিকার নাগরিকদের সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্যচিত্রে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে কীভাবে দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল এবং কীভাবে ১৫ বছরের শাসনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে খুন, গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী মত দমন করা হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন ত্যাগ করে হেলিকপ্টারে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এর আগে জুলাই মাসে কোটা আন্দোলনের সূত্র ধরে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভ ক্রমেই সরকারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ইতিহাস, তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিকভাবে পুনঃউত্থানের পটভূমিও তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার বিষয়টিও বিশ্লেষণ করা হয়।
বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী জানান, তাকে ‘আয়নাঘর’ নামে একটি জানালাবিহীন গোপন কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল, যেখানে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো। একইভাবে আট বছর গুম থাকার পর মুক্তিপ্রাপ্ত আবদুল্লাহিল আমান আযমী জানান, তিনি দীর্ঘদিন আলো-বাতাসহীন পরিবেশে বন্দি ছিলেন।
সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা সম্পর্কে সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান বলেন, “আমরা নাগরিকদের দিকে গুলি চালাই না। আমরা চেয়েছি রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলা কমিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে।”
তথ্যচিত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণে ড. ইউনূসের ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বলা হয়, ছাত্রদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতি ড. ইউনূসকে সরকার গঠনের অনুরোধ জানান। শুরুতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও জনগণের চাপের মুখে তিনি নেতৃত্ব গ্রহণে রাজি হন।
তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়, শেখ হাসিনার সরকার আমলে কমপক্ষে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “সরকারি প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকিং খাত থেকে অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এমনকি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকেও বিশাল অঙ্কের ঋণ দেয়া হয়েছে।”
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ অর্জনের অভিযোগও তথ্যচিত্রে উঠে আসে। তার বার্ষিক বেতন ছিল মাত্র ১৫ হাজার ডলার, অথচ লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে তার বিলাসবহুল সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে আল জাজিরা।
তথ্যচিত্রে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনিক সংস্কার, বিচারব্যবস্থার পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই তথ্যচিত্রটি একটি সংবেদনশীল ও ঐতিহাসিক সময়ের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রেক্ষাপটকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরেছে।