Your Ads Here 100x100 |
---|
দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেল। পর্দা থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন একসময়ের জনপ্রিয় টালিউড অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। সিনেমা প্রেমীদের হৃদয়ে দাগ কাটা সেই মুখটি যেন হারিয়ে গিয়েছিল সংসদ ভবনের আলো-আঁধারিতে। তবে সময়ের স্রোতে আবারও ফিরেছেন তিনি—এবার ভিন্ন এক যুগে, ভিন্ন এক পরিপ্রেক্ষিতে।
মৈনাক ভৌমিকের সিনেমা “বাৎসরিক” দিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন শতাব্দী। অভিজ্ঞতা যেমন নতুন, তেমনি স্মৃতির পাড়ে দাঁড়িয়ে খানিকটা উদ্বেগও।
“প্রযুক্তি বদলে গেছে, কাজের ধারা পাল্টেছে, মানুষও বদলেছে। ভাবছিলাম—মানিয়ে নিতে পারব তো?” — অকপটে স্বীকারোক্তি অভিনেত্রীর।
তবে এই প্রজন্মের পরিচালকের ওপর আস্থা রেখেই শুটিং ফ্লোরে ফিরেছেন তিনি। ভৌতিক গল্পের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা, আর তাতে এক ননদের চরিত্রে অভিনয়—আবারও দর্শকের সামনে নিজেকে নতুন করে হাজির করছেন শতাব্দী।
“আমার চরিত্রটি সদ্য স্বামীহারা এক নারীর ননদ। সম্পর্কের জট খুলতে খুলতে গল্প এগিয়ে যায়। তবে এখনই সব বলব না,”—একটু রহস্য রেখে বলেন তিনি।
বাস্তব জীবনের ‘ননদিনী’ কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা।
“আমি একেবারেই ‘রায়বাঘিনী’ নই। বৌদিদের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক। আমরা একসঙ্গে ঘুরে বেড়াই। টিপিক্যাল ননদ-বৌদির গল্প আমাদের জীবনে নেই।”
টালিউডের বর্তমান চিত্র প্রসঙ্গে শতাব্দীর দৃষ্টিভঙ্গি গভীর ও বাস্তবসম্মত।
“প্রেক্ষাগৃহ কমে গেছে। বাজেট সীমিত। দর্শকের ধৈর্যও কমে এসেছে। তাই গল্প বলার ধরন বদলাতে হচ্ছে। ভিন্ন মোড়কে সম্পর্কের গল্প দেখাতে হচ্ছে।”
তবু আশাবাদী তিনি। মনে করেন, বাংলা সিনেমা লড়ছে, পথ খুঁজছে।
“সব কিছু বদলালেও, দর্শক এখনো মুখ ফিরিয়ে নেয়নি—এটিই আশার কথা।”
এই প্রজন্মের অভিনেতাদের নিয়ে শতাব্দী রায় বেশ উদার।
“ওরা আত্মবিশ্বাসী, অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল। ওদের মধ্যেও কাজের প্রতি নিষ্ঠা আছে। অন্যভাবে, অন্যরকম।”
রাজনীতি বনাম অভিনয়—এই চিরন্তন প্রশ্নে শতাব্দীর জবাব বেশ দর্শনধর্মী।
“কে কোথায় অভিনয় করে, সেটি শুধু বিনোদন দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সম্পর্কেও অভিনয় চলে, সমাজেও, প্রতিদিনের জীবনে। বাঁচার তাগিদে, ঠকানোর তাগিদে—সবখানেই একরকম অভিনয় থাকে।”
তাঁর এক ভক্ত একদিন জিজ্ঞেস করেছিলেন—“অভিনয়ের বাইরে আপনি কী করেন?”
হেসে শতাব্দী উত্তর দিয়েছিলেন, নিজেরই কবিতার লাইন ধার করে:
“অভিনয় করি না।”
অভিনয় ছাড়াও শতাব্দী এখনো লিখে চলেছেন কবিতা। তবে তা খুব অনিয়মিত।
“লিখি, আবার না লিখলেও মনখারাপ করে। লিখব-লিখব করতে করেই সময় পেরিয়ে যায়।”
শতাব্দীর ফিরে আসা কেবল একটি চরিত্রের নয়—এ যেন ফিরে আসা তাঁর অভ্যন্তরের শিল্পীসত্তার, যাকে সময়, দায়িত্ব আর বাস্তবতা চাপা দিয়েছিল কিছুটা সময়ের জন্য। এখন আবার শুরু। আবার এক ‘নতুন শতাব্দী’।