Your Ads Here 100x100 |
---|
নিউজ ডেস্ক :
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, এখনও দেশে সাংবাদিকদের গালিগালাজ করা হচ্ছে, এমনকি তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দেওয়া হচ্ছে—যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ন্যায্য পারিশ্রমিক এবং নীতিগত সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম—উভয়ই আর্থিক অনিশ্চয়তায় রয়েছে, যা তাদের আপস করতে বাধ্য করছে।
রোববার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আয়োজিত ‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ: রিফর্ম রোডম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ইউনেসকো ঢাকা অফিস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং সুইডেন দূতাবাস যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
কমিশনের প্রস্তাবিত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে সংবাদমাধ্যমের রূপান্তর নিয়ে সমালোচনার জবাবে কামাল আহমেদ বলেন, অনেকেই একে অবাস্তব মনে করছেন, কারণ অধিকাংশ গণমাধ্যম লাভজনক নয় বা আর্থিকভাবে দুর্বল। কিন্তু হিসাব দপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় দেড় ডজন সংবাদমাধ্যম লাভ করছে—যা প্রমাণ করে, এই রূপান্তর বাস্তবায়নযোগ্য এবং যৌক্তিক।
তিনি আরও বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্তসংখ্যক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অপেশাদারভাবে পরিচালিত হচ্ছে। অনেকেই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল। পাঠক বা দর্শকের আগ্রহ না পেলেও তারা বিজ্ঞাপনের অস্বাভাবিক ছাড় দিয়ে পুরো শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
কামাল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপের পেছনে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হুমকি ও কথিত ‘মব ভায়োলেন্স’ দায়ী। সরকার এসব রোধে সক্রিয় হবে বলে আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না।
সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস বলেন, অনলাইনে ভুল তথ্য ও প্রপাগান্ডা রোধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি জানান, সাংবাদিকরা এখনো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না, অনেক প্রতিবেদন তাদের ফিল্টার করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের সামান্য অগ্রগতি ইতিবাচক হলেও গণমাধ্যমে নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া মানবাধিকারের সুরক্ষা সম্ভব নয়।
নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)–এর সভাপতি ও টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেন, দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমরা ১৬ ধাপ এগিয়েছি, কিন্তু রাজনৈতিক সরকার এলে ৩২ ধাপ পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ. কে. আজাদ আরও বলেন, প্রেস কাউন্সিল একটি অকার্যকর ও আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের ভূমিকাকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ বলেন। লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একজন সাংবাদিক অপরাধ করলে তার বিচারের জন্য নিয়মতান্ত্রিক পথ থাকা উচিত, তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে মরতে হবে কেন?’
তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের ‘সিক্রেট এজেন্সিগুলো’ সংবাদ পরিবেশনে হস্তক্ষেপ করছে। মফস্বল সাংবাদিকরা চরম অনিরাপদ অবস্থায় কাজ করছেন। তিনি জানান, দৈনিক সমকালের দুই মফস্বল সাংবাদিক সম্প্রতি হত্যার শিকার হয়েছেন।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এএফপির ব্যুরো চিফ শেখ সাবিহা আলম, বিজেসির চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক রাজা এবং সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।