Your Ads Here 100x100 |
---|
খবরের দেশ ডেস্ক
কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুক হামলার জবাবে বুধবার গভীর রাতে পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে ৮ জন নিহত ও কমপক্ষে ৩৫ জন বেসামরিক মানুষ আহত হয়েছেন। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’।

ঠিক কোন কৌশলে এই নাম বেছে নিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, তা নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন নিউইয়র্ক-ভিত্তিক পাকিস্তানি লেখক আজাদ ইসার। যিনি মিডল ইস্ট আইয়ের সাংবাদিক এবং জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে গবেষণা করছেন।
তার মতে, পাকিস্তানের চালানো অভিযানে সিঁদুর নামকরণ চরমপন্থি হিন্দু চিন্তার প্রতিফলন। সিঁদুর মাধ্যমে যেমন একজন নারীকে বিবাহ করা হয়, তেমনি পাকিস্তানসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোকে অখন্ড ভারতের অংশ বানানোর চেষ্টা করছে হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠনগুলো।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) আজাদ লেখেন ‘ভারত অপারেশন সিঁদুর নামকরণ করেছে—এর প্রতীকী অর্থকে অবহেলা করা উচিত নয়। সিঁদুর হলো এক ধরনের লাল রঙ, যা হিন্দু বর তার কনের কপালে পরিয়ে দেয়—বিবাহের প্রতীক হিসেবে। এটি একটি ফ্যাসিস্ট হিন্দু জাতীয়তাবাদী মানসিকতা, যেখানে পাকিস্তানকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত নিজেকে একটি সাম্রাজ্য হিসেবে উপস্থাপন করছে’।
এই নামকরণের পেছনে যে প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে, সেটিকে তুলে ধরেছেন সাংবাদিক আজাদ ইসার। মূলত এই টুইটে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন একটি সামরিক অভিযানের নাম এমন একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতীকের নামে রাখা হলো, যার মধ্য দিয়ে একটি ভূখণ্ডকে দখল বা মালিকানার চিহ্ন হিসেবে দেখানো হয়।
আজাদ ভারত সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে কেবল সামরিক নয়, বরং ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রতিফলন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আজাদ ইসার এই বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন আরেক পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী আম্মার আলি জান।
সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে আজাদ ইসার টুইট শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘আমি জানি না এই বিশ্লেষণ কতটা সঠিক, কিন্তু যেহেতু আমি নিজেও হিন্দু উগ্রপন্থা নিয়ে গবেষণা করেছি, এতটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়—হিন্দুত্ববাদীরা পুরো উপমহাদেশে আধিপত্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখে’।
‘এই কারণেই মোদি সরকারের মন্ত্রীরা এবং সামাজিকমাধ্যমে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা গাজায় গণহত্যার সমর্থন করে এবং বারবার বলে যে পাকিস্তান ও কাশ্মীরিদের সাথেও একই ব্যবহার করা উচিত’।
আম্মারের ভাষ্য, ‘এই পশ্চাদপদ চিন্তার এখন মার্কিন সহায়তাও রয়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র চায় চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহার করতে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও মোদি একটি চুক্তি সই করেন যার নাম ছিল ‘মার্কিন-ভারত কমপ্যাক্ট (২১শ শতাব্দীর জন্য সামরিক অংশীদারিত্ব, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তির ত্বরান্বিত সম্ভাবনা উন্মোচনের উদ্যোগ’) —এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতকে আরও অস্ত্র দেওয়া হবে এবং ভারত ও ইসরাইল একসঙ্গে একটি বাণিজ্যিক করিডোর গড়ে তুলছে’।
আম্মার আরো লেখেন, ‘পাকিস্তানের উদারপন্থি মহলের প্রতি আমার অনুরোধ, অনুগ্রহ করে ভারতের প্রতি প্রেমমুগ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসুন। যদি ধরে নেওয়া হয় ভারত এক সময়ে লিবারেল ও ধর্মনিরপেক্ষ ছিল, তবে এখন আর তেমনটি নেই। এখন গুজরাটে সহস্রাধিক নিরীহ মানুষ হত্যা করা মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, যিনি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গোটা অঞ্চলকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছেন। তার চীন ও পাকিস্তানের পাশাপাশি নেপাল, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের সঙ্গেও সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে’।
‘মোদি সরকারের কৌশলগত নীতির মূল লক্ষ্য পাকিস্তানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা—কোনো প্রগতিশীল আন্দোলনের সহায়তা নয়’।
‘এ কারণেই মিথ্যা অভিযোগ তুলে ভারত প্রথমে পাকিস্তানের পানি বন্ধ করেছে, আর এখন পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালিয়েছে। এই মৌলিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই অঞ্চলটির বাস্তব অবস্থা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব’।ভারত সরকার কিংবা সামরিক নেতৃত্বের কেউ অবশ্য অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান নামকরণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই ভিত্তিহীন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। একইসঙ্গে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ভারতের তিনটি রাফাল, একটি মিগ-২৯ এবং একটি সু-৩০, একটি অত্যাধুনিক ড্রোন যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে দেশটির বিমান বাহিনী।