Your Ads Here 100x100 |
---|
লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় ব্যতিক্রমী এক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন হাজেরা খাতুন নামে এক নারী পরীক্ষার্থী। মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে পথে সন্তান প্রসব করেন তিনি। পরে হাসপাতালের বেডেই কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নেন এই সাহসী শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, হাজেরা খাতুন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের চর বজরা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি হাতীবান্ধা সরকারি আলীমুদ্দিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান শ্রেণির (মাস্টার্স) ছাত্রী। স্বামী আব্দুর রশিদের সঙ্গে পাঁচ বছরের সংসারে তিনি একজন কন্যা সন্তানের জননী।
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ক্লাস এবং তাত্ত্বিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শেষে বুধবার ছিল তার ব্যবহারিক পরীক্ষা। স্বামীর সঙ্গে অটোরিকশাযোগে কলেজে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কলেজ গেটে পৌঁছানোর আগেই হঠাৎ প্রসব বেদনা ওঠে। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিবকে ফোন করেন। তার পরামর্শে দ্রুত তাকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে দুপুরে তিনি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।
সন্তান জন্মের পর কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশেষ উদ্যোগ নেয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে শিক্ষকরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে হাজেরার ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ করেন। পরীক্ষার সময় নবজাতককে উপহারও দেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে কলেজের সহযোগিতায় হাজেরাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়।
হাজেরার স্বামী আব্দুর রশিদ বলেন, “সংসার ও সন্তানের দায়িত্ব সামলেও আমার স্ত্রী লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। আজ আমাদের পরিবারে এসেছে নতুন অতিথি। আমরা খুবই আনন্দিত।”
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনারুল হক বলেন, “হাজেরা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ আছেন। নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”
হাজেরা খাতুনের এই অধ্যবসায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। কলেজের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোজাম্মেল হক বলেন, “একজন শিক্ষার্থী যেন অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। হাজেরার মনোবল আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীসহ অনেকেই হাজেরাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, “হাজেরা খাতুন মাতৃত্ব ও শিক্ষার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।”