Your Ads Here 100x100 |
---|
বগুড়া প্রতিনিধিঃ
উত্তরের কৃষিপ্রধান জেলা বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা। মাঠে ঘাম ঝরিয়ে উৎপাদন করা ফসল বিক্রিতে কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। কেউ কেউ দুষছেন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে, আবার কেউ বলছেন—আবহাওয়ার কারণে ধানের মান কমে যাওয়ায় কমেছে দাম।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আদমদীঘির ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। কৃষকরা এ বছর জিরাশাইল, পারিজা, সুবর্ণলতা, সুমনলতা, কাটারি, চিনি আতপ এবং হাইব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছেন।
তবে বাজারে গিয়ে কৃষকদের মুখে শোনা গেলো হতাশার সুর। অনেকেই বলছেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও বাজারে ধানের ন্যায্য মূল্য মিলছে না। ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম স্থিতিশীল থাকলেও সারের দাম, কীটনাশক ব্যবহার, শ্রমিকের মজুরি এবং অতিরিক্ত সেচের কারণে চাষে খরচ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
সরেজমিনে ছাতিয়ানগ্রাম, সান্তাহার, শাঁওইল ও আদমদীঘি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ধানের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। জিরাশাইল ধান যা আগের সপ্তাহে ১,৩০০ থেকে ১,৪৫০ টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কমে। কাটারি ধানের দর কমে হয়েছে ১,১০০ থেকে ১,১৫০ টাকা। চিনি আতপ ধানও একইভাবে ১৫০-২০০ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড ধান মিলছে ৯৫০ টাকা মণে।
ছাতিয়ানগ্রাম হাটে সকাল থেকেই ধান বিক্রির ভিড় থাকলেও, দাম কম হওয়ায় অনেকেই ধান বিক্রি না করেই ফিরে গেছেন। শুক্রবার ও সোমবার নিয়মিত হাট বসলেও, অন্যান্য দিনেও এখানে ধান কেনাবেচা চলে।
স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী মিলন বলেন, ‘গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ধানের রং ও মান দুটোই নষ্ট হয়েছে। অনেক ধানে পচা গন্ধ আসছে, আবার অনেক ধানে চারা (ট্যাক) গজিয়েছে। এই ধান আমরা কিনে সংরক্ষণ করতে পারি না, পচে যাবে। তাই ভালো ধান ছাড়া কিনছি না।’
আরেক ব্যবসায়ী আলমগীর জানান, ‘রোদ না থাকায় ধানের রঙ পরিবর্তন হয়েছে। ভেজা ও নিম্নমানের ধান কিনে পরে আমাদেরই ক্ষতি হবে, তাই দাম কম দিচ্ছি। তবে শুকনো ধানের দাম তুলনামূলকভাবে ঠিক আছে।’
অন্তাহার গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে ফেলেছে। মিল মালিকরাও ধান মজুত করছেন, ফলে বাজারে চাহিদা কম থাকছে। এতে আমরা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
সদরের শিয়ালসন গ্রামের কৃষক শফিক মিয়া বলেন, ‘এ বছর ছয় বিঘা জমিতে ইরি ধান আবাদ করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি—প্রতি বিঘায় ২১ মণ পর্যন্ত। কিন্তু এক বিঘায় খরচ হয়েছে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই দামে ধান বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা সম্ভব না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়লেও, আমাদের ফসলের দাম কম। ধান চাষ এখন লোকসানের খাতায়।’