| Your Ads Here 100x100 |
|---|
চালতা বা চালিতা বা চাইলতে এক রকমের ভারতবর্ষীয় উদ্ভিদ। চালতার ফল খুব আদরণীয় নয়। এই ফল দিয়ে চাটনি ও আচার তৈরি হয়। গাছটি দেখতে সুন্দর বলে শোভাবর্ধক তরু হিসাবেও কখনো কখনো উদ্যানে লাগানো হয়ে থাকে।
চালতার জন্ম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এটি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশে জন্মে।
চালতা গাছ মাঝির আকারের চিরহরিৎ বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছ উচ্চতায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। গাছের গায়ে লালচে রঙের চকচকে বাকল থাকে। পাতার কিনারা খাঁজ কাটা, শিরা উঁচু সমান্তরাল। চালতার সাদা রঙের ফুল দেখতে সুন্দর ; এটি সুগন্ধযুক্ত। ফুলের ব্যাস ১৫-১৮ সেন্টিমিটার। ফুলে পাঁচটি মোটা পাপড়ি বেষ্টিত কেন্দ্রে প্রচুর হলুদ পুংকেশর থাকে বৃতিগুলো
সেসব পাঁপড়িকে আঁকড়ে ঘিরে রাখে। বছরের মে-জুন মাসে ফুল ফোটার মৌসুম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চালতা অক্সালিকম, ট্যানিক, ম্যালিক ও সাইট্রিক নামক প্রাকৃতিক এসিডে সমৃদ্ধ। ফলটি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন-এ, বি ও সি এর ভালো উৎস। এটি অন্ত্রের সংক্রমণ, অর্শরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া নিরাময়ে সাহায্য করে।
পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী চালতায় রয়েছে- আমিষ ০.৮ গ্রাম, শ্বেতসার ১৩.৪ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, ৫৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-এ ও খাদ্যশক্তি ৫৯ কিলো ক্যালরি।
চালতা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’-এর ভালো উৎস। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকায় এই ফল স্কার্ভি ও লিভারের রোগ প্রতিরোধ করে।
চালতায় রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা জরায়ু ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, যা বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
চালতায় উপস্থিত আয়রন রক্তের লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সহায়তা করে। রক্তের সংবহন ঠিক রাখে। চালতার বিভিন্ন উপাদান হার্টের নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
চালতা পেটের নানা অসুখ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডায়রিয়া সারাতে কাঁচা চালতার রসের তুলনা নেই।
রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে চালতা।
ঠাণ্ডা ও কাশির জন্য পাকা চালতার রস চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
কিডনির নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে চালতা।
পাতা ও মূলের উপকারিতা : শুধু ফল নয়, চালতার মূল ও পাতারও রয়েছে ওষুধিগুণ। রক্ত আমাশয় গাছের কচি টাটকা পাতা বেটে তার রস এক কাপ ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে নিন। দিনে দুবার খেলে এই সমস্যার উপশম ঘটবে। মচকে গিয়ে ব্যথা পেলে সেখানে চালতা গাছের মূল ও পাতা পিষে প্রলেপ দিলে ব্যথা কমে যায়।
সতর্কতা: দিনে ১০০ গ্রামের বেশি এই ফলটি না খাওয়াই উত্তম। অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো ফলাফল পেতে চালতা গাছের পাতার রসের সঙ্গে ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেতে পারেন। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীরা এই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
মোঃ শফিকুল ইসলাম ভূঞা, মুন্সিগঞ্জ

