আমরা মনে করি আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে না : হাসনাত আবদুল্লাহ

মো. মাহিন খান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংস্কারের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক শক্তিগুলোই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে ঝালকাঠি শহরের ফাতেমা কনভারসেশন হলে আয়োজিত জেলা সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মাইনুল ইসলাম মান্না।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা মনে করি, আগামী সংসদে যারা সংস্কারের পক্ষে থাকবে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। সংস্কারের শক্তির পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবো।”

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয় না সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সচিবালয়ে ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড—সবকিছুই ভাগাভাগি চলছে। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসনকে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নির্বাচন কমিশনও নিরপেক্ষ নয়; তাদের কোনো কার্যকর নীতিমালা নেই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা জেনেছি, ভোটার তালিকায় দেড় কোটি মৃত ভোটারের নাম রয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে কবর থেকে উঠে এসে ভোট দিয়েছে—এমন খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ না হয় এবং ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন আয়োজন না করে, তাহলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়।”

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইসি যেন ব্যক্তির ইচ্ছায় নয়, নীতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ জনগণ এখন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায়।”

আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সমালোচনা করে এনসিপির এই নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগ এখন আর রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন। তাদের যদি জনগণের সমর্থন থাকতো, তাহলে পালিয়ে বেড়াতে হতো না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে হতো না। ডামি নির্বাচন আয়োজন করতেও হতো না।”

তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট শাসনের সময় ছাত্রশিবির, বিএনপি বা ছাত্রদলের কেউ গুম-খুন হলে সেটাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। অনেক সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মী তখন আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ছিলেন, তারা তখন মানবতার কথা বলেননি।”

ভোটের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ভোট চাইবো সেই নাগরিকদের কাছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, যারা গুম-খুন ও অপরাধে জড়িত নয়। নতুন বাংলাদেশ গড়তে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোকেই একত্র হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এনসিপি রাষ্ট্র বিনির্মাণের চিন্তায় আছে। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখে, তাহলে নির্বাচন সফল ও সুষ্ঠু হবে। গণতন্ত্র ও আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে সকল রাজনৈতিক শক্তিকেই দায়িত্ব নিতে হবে।”

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিভাগীয় সংগঠনিক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, যুগ্ম সদস্য সচিব মশিউর রহমান ও মাহমুদা মিতু, মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বরিশাল জেলার প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাঈদ মূসাসহ চার উপজেলার এনসিপি নেতৃবৃন্দ।