ঢাকার মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল (১৫) হত্যাকাণ্ডের প্রায় আড়াই দিন পর গৃহকর্মী আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের দক্ষ তত্ত্বাবধানে পূর্বের চুরির তথ্য ও একটি পুরনো মোবাইল নম্বরই শেষ পর্যন্ত এই ‘ক্লুলেস’ মামলার রহস্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম।
তিন দিনের চাকরির মেয়াদেই হত্যাকাণ্ড
গত ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫১ থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যেই ঘটে নির্মম এ হত্যাকাণ্ড। মাত্র তিন দিন আগে কাজ শুরু করা গৃহকর্মী আয়েশার বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতদের স্বামী আজিজুল ইসলাম।
তদন্তের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—আয়েশার কোনো ছবি, এনআইডি কিংবা নির্দিষ্ট পরিচয় পুলিশের কাছে ছিল না; সিসিটিভিতেও সে ছিল পুরোপুরি বোরকায় ঢাকা।
ক্লু না পেয়ে ‘ম্যানুয়াল’ তদন্ত
কোনো ডিজিটাল তথ্য না থাকায় পুলিশ গত এক বছরে গৃহকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত চুরির অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে শুরু করে। গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্পে বসবাস, পূর্বের চুরির ধরণ—এসব বিবরণ মিলিয়ে শনাক্ত হয় আয়েশা।
হুমায়ুন রোডের এক ঘটনার সূত্রে পাওয়া পুরনো একটি মোবাইল নম্বর বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পারে, নম্বরটি ব্যবহার করত রাব্বি নামের এক ব্যক্তি। পরে জানা যায় রাব্বির স্ত্রীই হলো আয়েশা।
হেমায়েতপুরে গিয়ে তাদের বাসা তালাবদ্ধ পাওয়া গেলে পুলিশ আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। শেষ পর্যন্ত ঝালকাঠির নলছিটির চরকায়া গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আয়েশার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি চুরি করা ল্যাপটপ।
হত্যার দায় স্বীকার
জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা জানায়—কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন সে ২ হাজার টাকা চুরি করে। এরপর এ নিয়ে গৃহকর্ত্রীর তর্কাতর্কি থেকে বিরোধ শুরু হয়। চতুর্থ দিন সে সুইচ গিয়ার থেকে নেওয়া ছুরি লুকিয়ে নিয়ে গিয়ে লায়লা আফরোজাকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে। মাকে বাঁচাতে এসে মেয়েও আয়েশার ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। ইন্টারকম দিয়ে গার্ডকে কল দেওয়া ঠেকাতে সে সংযোগ তারও ছিঁড়ে ফেলে।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মা–মেয়ের।