Your Ads Here 100x100 |
---|
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের কালনী নদীর পূর্ব পাড়ে বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী হাওর উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, আইডব্লিউএম, সিইজিআইএস ও গ্রামীণ জনকল্যাণ সংসদের সহযোগিতায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
উৎসবে সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, অডিও-ভিডিও প্রদর্শনী, গম্ভীরা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রীতি ফুটবল ম্যাচ।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা হাওর সংরক্ষণ, পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কমিউনিটি ট্যুরিজমের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট বাউল শিল্পী শাহ আলম সরকার, সাহিত্যিক ও গবেষক ড. আনোয়ারুল করিম এবং সমাজসেবক রাশেদা বেগম। তাঁরা হাওর অঞ্চলের ঐতিহ্য, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ওপর তাঁদের মূল্যবান মতামত প্রদান করেন।

এ ছাড়া সুনামগঞ্জের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের স্মরণে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম, সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, কবি হাসন রাজা এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাধারমণ দত্তের অবদান তুলে ধরা হয়। তাঁদের কর্মজীবন ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনায় বক্তারা তাঁদের অনুপ্রেরণা ও দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সুনামগঞ্জের বাউল গান বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শাহ আবদুল করিম ও হাসন রাজা তাঁদের গান ও দর্শনের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন এবং মানবতার বাণী প্রচার করেছেন। তাঁদের গান আজও বাংলার মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে। উৎসবে তাঁদের গান পরিবেশন করেন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা, যা দর্শকদের মন কেড়ে নেয়।
উৎসবের অংশ হিসেবে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে স্থানীয় পণ্য ও সংস্কৃতির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী, হস্তশিল্প এবং স্থানীয় কৃষি পণ্য প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়া বাউল গান, লোকনৃত্য এবং পালাগানের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়।
স্থানীয় কৃষি ও মাছ চাষের উন্নয়ন, পলি ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ ধরনের উৎসবকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ধরনের আয়োজন হাওরাঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।