32 C
Dhaka
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

জরিপের ৪০% মানুষ ছাত্রদের দলকে সমর্থন করছে, তবে বিশ্লেষণ বলছে, বাস্তবতা হয়ত কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।”

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দ্বারা গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন জরিপে দাবি করা হয়েছে, দেশের ৪০% মানুষ এই দলকে ভোট দিতে চায়। কিন্তু এটি কি বাস্তব চিত্র নাকি জনমত প্রভাবিত করার কৌশল? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য প্রয়োজন গভীর বিশ্লেষণ।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত জরিপ অনুসারে, ১৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে:
৪০% মানুষ বলেছে, তারা ছাত্রদের দলকে ভোট দেবে।
১৬% মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে, যদিও বিএনপির সাধারণত ৩০-৩৫% ভোট ব্যাংক রয়েছে।
১১% মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছে, কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে জামায়াতের এত বেশি ভোট কখনো ছিল না।
আওয়ামী লীগের ভোট ৯% বলা হয়েছে, যা অনেক কম এবং বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
৩৮% মানুষ তখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, তারা কাকে ভোট দেবে।
এই তথ্য বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আসে:
বিএনপির ভোট কমে গেল কেন? সাধারণত, বিএনপির ভোট ৩০% এর কাছাকাছি থাকার কথা। যদি জরিপ অনুসারে বিএনপির ভোট ১৬% হয়, তাহলে বাকি ১৪% ভোট কোথায় গেল?
জামায়াতের এত ভোট কীভাবে হলো? বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে জামায়াতের এত শক্তি দৃশ্যমান নয়।
আওয়ামী লীগের ভোট এত কমে গেল কেন? এটি কি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের প্রতিফলন, নাকি জরিপে তথ্যগত সমস্যা রয়েছে?
এই জরিপ কি প্রকৃত পরিস্থিতি প্রতিফলিত করে নাকি জনমত গঠনের প্রচেষ্টা?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন দল গঠন করলেই জনসমর্থন পাওয়া যায় না। এজন্য শক্তিশালী নেতৃত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো, অভিজ্ঞতা এবং জনগণের আস্থা প্রয়োজন। নতুন ছাত্রদের দল যদি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জনমতের এই সমর্থন সাময়িক হতে পারে।
নতুন দলের নেতৃত্বে কারা থাকবেন, তা নিশ্চিত নয়। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেও, দেশের নেতৃত্ব দেওয়া এক ভিন্ন বিষয়। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির গঠনকালীন সময়ে দলীয় প্রধানরা নিজ নিজ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সেনাবাহিনীর আনুকূল্য পেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন ছাত্রদের দলে সেই সুবিধা নেই।
বাংলাদেশের জনগণ সাধারণত প্রতীকের প্রতি বেশি আনুগত্যশীল। নির্বাচনগুলোতে দেখা যায়:
বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রতি জনগণের ঐতিহ্যগত সমর্থন রয়েছে।
আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীক দীর্ঘদিন ধরে সরকারে থাকায় বেশ জনপ্রিয়।
জামায়াতের ‘দাঁড়িপাল্লা’, ইসলামি আন্দোলনের ‘হাতপাখা’ প্রতীক সাধারণত নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভোট পেয়ে থাকে।
ছাত্রদের দল নতুন প্রতীক আনলে তা কতটুকু জনপ্রিয় হবে, সেটি বলা কঠিন।
এছাড়া, আন্দোলন করে সরকার হটানো এবং নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করা এক জিনিস নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে হলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও সাংগঠনিক দক্ষতা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম বড় প্রশ্ন হলো, আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে? বর্তমানে দুটি সম্ভাব্য সময় নিয়ে আলোচনা চলছে:
২০২৫ সালের ডিসেম্বর: নির্বাচন কমিশন এই সময়কে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে।
২০২৬ সালের জুন: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য এই সময়কেও সম্ভাব্য বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে, নির্বাচন যদি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে না হয়, তাহলে তা ২০২৬ সালের শেষদিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই দেরি বিএনপির জন্য কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটি বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন দল গঠন করে টিকে থাকার নজির খুব বেশি নেই। উদাহরণস্বরূপ:
এক-এগারোর সময় গঠিত ‘কিংস পার্টি’গুলো পরবর্তীতে টিকে থাকতে পারেনি।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের শক্তিশালী জনভিত্তির কারণে এখনও রাজনীতির কেন্দ্রে আছে।
জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন ধরে একটি মধ্যপন্থি অবস্থান নিয়ে টিকে আছে।
নতুন ছাত্রদের দল টিকে থাকতে হলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং কার্যকর কৌশল নিতে হবে। একমাত্র জনসম্পৃক্ততা এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তারা নিজেদের জায়গা তৈরি করতে পারবে।
নতুন ছাত্রদের দল নিয়ে করা জরিপের তথ্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এটি বাস্তব প্রতিফলন নাকি জনমত প্রভাবিত করার কৌশল, তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশে নির্বাচনের গণিত বরাবরই জটিল এবং শুধুমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের মনজয় করা সম্ভব নয়। জনমতের প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য আরও নিরপেক্ষ গবেষণা ও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
বাংলাদেশের জনগণ সরকার পরিবর্তন চায়, তবে প্রশ্ন হলো—তারা কাকে বিকল্প ভাববে? যদি ছাত্রদের দল তাদের রাজনৈতিক যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিতে পারে, তাহলে তারা রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। অন্যথায়, তারা শুধুমাত্র আরেকটি স্বল্পস্থায়ী রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবেই বিবেচিত হবে।

খবরের দেশ

 

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

আমির খানের নতুন প্রেমিকা কে?

তৃতীয় বিয়ের গুঞ্জন সত্যি করে অবশেষে নতুন প্রেমিকাকে প্রকাশ্যে আনলেন বলিউড অভিনেতা আমির খান। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এ...