Your Ads Here 100x100 |
---|
রাত গভীর হলে, ঘুম যখন মনের পর্দা টেনে দেয়, তখন আমরা প্রবেশ করি এক রহস্যময় রাজ্যে—স্বপ্নের জগতে। সেখানে নিয়ম নেই, সীমা নেই, বাস্তবের শৃঙ্খল নেই। তবে যদি হঠাৎ বুঝতে পারেন, আপনি স্বপ্নের মাঝেই আছেন? যদি পারেন সেই স্বপ্নকে নিজের ইচ্ছামতো গড়তে, পাল্টাতে, উড়তে, হারিয়ে যেতে? এ এক অলৌকিক অনুভূতি, যার নাম লুসিড ড্রিম।
স্বপ্ন যখন হয়ে ওঠে বাস্তবের মতো স্পষ্ট তখনই তৈরী হয় লুসিড ড্রিমের। লুসিড ড্রিম মানে শুধু স্বপ্ন দেখা নয়, বরং স্বপ্নের মাঝে জেগে ওঠা। সাধারণ স্বপ্নের মতো নয়, যেখানে আমরা কেবল ঘটনাপ্রবাহের পথিক; এখানে আমরা পরিচালকের আসনে বসি। একবার উপলব্ধি করলে, এই স্বপ্নজগৎ হয়ে ওঠে এক ক্যানভাস, যেখানে আমরা ইচ্ছেমতো রং করতে পারি, গড়ে তুলতে পারি অবাস্তবকে বাস্তবের মতো।
লুসিড ড্রিম সাধারণত ঘটে তখনই, যখন অবচেতন মন আর চেতনার মাঝখানে এক অদ্ভুত সেতুবন্ধন তৈরি হয়। কিছু কিছু মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এর অভিজ্ঞতা পান, আবার কেউ কেউ সচেতন প্রচেষ্টায় এর দ্বার উন্মুক্ত করতে পারেন। রিয়ালিটি চেক, স্বপ্নের ডায়েরি রাখা, কিংবা ধ্যানের গভীরে হারিয়ে যাওয়া এসব অভ্যাস ধীরে ধীরে মনের বন্ধ দরজা খুলে দিতে পারে।
স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণের অলৌকিকতা তৈরি করতে কল্পনা করুন, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন এক বিশাল পাহাড়ের চূড়ায়। পায়ের নিচে নরম মেঘ, মাথার ওপর নক্ষত্রের সারি। আপনি দৌড় দিলেন, তারপর হঠাৎ দেখলেন আপনি উড়ছেন! লুসিড ড্রিমে আপনি নিজেকে পরিণত করতে পারেন বাতাসের মতো হালকা, সমুদ্রের মতো গভীর, কিংবা সময়ের সীমানাহীন এক অভিযাত্রিকে।
শুধু কি কল্পনার জগতে হারিয়ে যাওয়া? না, এর আরও গভীরতা আছে। গবেষণা বলছে, লুসিড ড্রিম সৃজনশীলতা বাড়াতে পারে, ভয় কাটাতে পারে, এমনকি নতুন দক্ষতাও শেখাতে পারে। কিছু বিজ্ঞানী বলছেন, স্বপ্নের জগতে আপনি যদি কোনো দক্ষতা অনুশীলন করেন, তা বাস্তব জীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে।
স্বপ্ন কি শুধুই খেলা, নাকি এর গভীরে লুকিয়ে আছে কিছু বেশি? বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, এই বিশেষ স্বপ্নের জগৎ আমাদের মস্তিষ্কের সাথে কীভাবে সংযুক্ত? কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, লুসিড ড্রিমের সময় prefrontal cortex নামে মস্তিষ্কের যে অংশটি সচেতন চিন্তাভাবনার জন্য কাজ করে, সেটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় এ কি শুধুই এক মানসিক খেলা, নাকি এটি আমাদের চেতনার নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে?
যদি স্বপ্নের রাজ্যের চাবি পেতে চান, তবে আপনিও প্রবেশ করতে পারেন এই জগতে। প্রতিদিন একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন—”আমি কি স্বপ্ন দেখছি?” দিনে দিনে এই অভ্যাস আপনার অবচেতন মনে গেঁথে যাবে, আর একদিন স্বপ্নের মাঝেই আপনি বুঝতে পারবেন, “হ্যাঁ, আমি স্বপ্ন দেখছি!” তারপর? তারপর আপনিই হবেন নিজের কল্পনার স্রষ্টা, স্বপ্নের পৃথিবীর সম্রাট/সম্রাজ্ঞী।
রাতের আঁধারে যখন পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে, তখনও কোথাও এক জগত জেগে থাকে, স্বপ্নের জগৎ। কেউ সেখানে পথিক, কেউ নির্মাতা। আপনি কোনটা হতে চান?
~আফরিনা চম্পা ফসল ~