34 C
Dhaka
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

“ট্রাম্পের নীতি ও কৌশল: দেশের ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রভাব

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

বাংলার প্রবাদ “অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়” আজকের বিশ্বরাজনীতিতে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই প্রবাদটি যেমন প্রতিফলিত হয়, তেমনি তার নীতি দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা বিতর্ক ও জটিলতা সৃষ্টি করছে। এই প্রতিবেদনটি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আচরণ, বাণিজ্য নীতি, ভূগোলগত বিতর্ক এবং অভিবাসন নীতির প্রেক্ষাপটে তাঁর কর্মকাণ্ডকে বিশ্লেষণ করে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের এবং বিশ্বরাজনীতির ওপর প্রভাব ফেলছে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই তাঁর ব্যক্তিগত অহংকার এবং স্বার্থপরতা রাজনৈতিক নাটকের কেন্দ্রে ছিল। ২০১৭ সালে তাঁর অনেক বক্তব্য ও পদক্ষেপ বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। ট্রাম্প নিজেকে সর্বশক্তিমান হিসেবে উপস্থাপন করতে থাকেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সাথে মিলিয়ে নেন। তাঁর এই নীতি ও কর্মকাণ্ডের ফলে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়।
ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির অন্যতম প্রধান দিক হলো বাণিজ্যযুদ্ধ ও কর নীতি। হোয়াইট হাউস বিভিন্ন দেশের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করে। চীন, কানাডা, মেক্সিকোসহ অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের মধ্যে, ট্রাম্পের নীতি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ৫০,০০০ ডলারের একটি গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়, তবে ক্রেতাকে প্রায় ১২,৫০০ ডলার অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই নীতির ফলে দেশীয় অর্থনৈতিক ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে এবং মধ্যম পর্যায়ের অর্থনৈতিক মন্দা ঘটার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো উপসাগরকে ‘গালফ অব আমেরিকা’ নামে উল্লেখ করে, যা একটি ভূগোলগত পরিবর্তনের পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বহন করে। এই নামকরণ আন্তর্জাতিক মানচিত্রে শক্তির পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত দেয়। প্রতিবেশী দেশের প্রতি এমন আগ্রাসী মনোভাব আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে জটিল করে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের মর্যাদা ও অবস্থানকে প্রভাবিত করে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই ধরনের নামকরণ দেশের ভূগোলগত পরিচয় পুনর্গঠনের একটি চেষ্টা, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন দ্বন্দ্বের সূত্রপাত করতে পারে।
ট্রাম্পের নীতিতে প্রাচীন উপনিবেশবাদী নীতি পুনরায় প্রতিফলিত হচ্ছে। ইতিহাসবিদরা জানান, ১৯৪৫ সালের পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা ক্ষমতার ব্যবহার অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে করতেন, কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এই সূক্ষ্মতা দেখা যায় না। ব্লুমবার্গ এবং দ্য নিউইয়র্কার এর প্রতিবেদনে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে নেপোলিয়ন-মানসিকতার সাথে তুলনা করা হয়েছে। তাঁর নীতিতে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও রাজনৈতিক অহংকারের ছোঁয়া স্পষ্ট, যা ইতিহাসের বড় নেতাদের তুলনায় অস্বাভাবিক। এই ধরনের নীতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও বিরোধের কারণ হিসেবে কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্র বহু জাতি, বর্ণ ও ধর্মের মানুষের দেশ। অভিবাসনবিরোধী নীতির গ্রহণ দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমন্বয়কে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে; সরকারিভাবে অনেক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা চলছে। বিভিন্ন শহরে নাগরিকরা এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। মানবাধিকার সংস্থা ও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের মতে, এই নীতি কেবল অভিবাসী সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে না, বরং দেশের ঐক্য ও জাতিগত বৈচিত্র্যকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রশাসনিক কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন। “দুর্নীতি নির্মূল” এর নামে ট্রাম্প তাঁর শাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক পুনর্গঠন শুরু করেছে । তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষে নিজের পছন্দের মানুষ নিয়োগ করার ফলস্বরূপ, প্রশাসনিক অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। ইউএসআইডি, সিআই, এফবিআইসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশের শাসন ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে । এই পরিবর্তনের ফলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়ে বলে অনেকের ধারণা ।
ট্রাম্পের প্রশাসনে তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক পরামর্শদাতাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ইলন মাস্কের উপস্থিতি উদাহরণ স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। মাস্কের মন্তব্য ও পদক্ষেপ ট্রাম্পের নীতিতে প্রভাব ফেলছে; তিনি সরকারের খরচ কমানোর পরিকল্পনাকে সমর্থন করার পাশাপাশি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে নিজস্ব মতামত প্রদান করছেন। এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাষ্ট্রীয় নীতিতে ব্যক্তিগত স্বার্থের ছোঁয়া নিয়ে আসতে পারে বলে সমালোচকদের দাবি
ট্রাম্পের নীতি ও কৌশল, যা ইতিহাস, অর্থনীতি, ভূগোল এবং অভিবাসন নীতির প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করা হলে, স্পষ্ট যে তাঁর কর্মকাণ্ড শুধু স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক লাভের দিকে লক্ষ্য রাখে না বরং দীর্ঘমেয়াদে দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর গভীর প্রভাব
এই বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্পের নীতি শুধু একমাত্র রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং তা দেশের অর্থনীতি, সামাজিক বিন্যাস, ভূগোলগত পরিচয় এবং প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। ভবিষ্যতে এই নীতির প্রভাব কতটা স্থায়ী হবে, তা সময়ই প্রকাশ করবে।

 

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

কামরাঙ্গীরচর ও নারায়ণগঞ্জে ২০ লাখ টাকার জাল নোটসহ তিনজন গ্রেপ্তার

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ২০ লাখ টাকার জাল নোট এবং জাল নোট তৈরির সরঞ্জামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে...