| Your Ads Here 100x100 |
|---|
‘তিস্তা নদীর ভাঙনে সব হারাইছি। সরকার দেওয়ায় একটা ঠিকানা হইছিল। তাও কাইড়া নেওয়া হইল। অহন কোথায় যাব, জানি না।’ আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের গণকপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রিফা আক্তার।
রিফার মতো বাস্তুহারা হয়েছেন আঃ হান্নান, মোহাম্মদ আলী, রফিকুল ইসলাম, মমতাজ বেওয়া, দেলোয়ারা বেওয়া, মজিবর রহমান, উজ্জ্বল মিয়া ও প্রতিবন্ধী নুর বানু। তাদের তাড়িয়ে ১০টি ঘর দখলের অভিযোগ উঠেছে আনসার আলী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তিনি বাসিন্দাদের তাড়িয়ে ঘরের চারপাশে ধান আবাদ করেছেন। বাধা দিলে তোপের মুখে পড়তে হয় গ্রামবাসীকে।
জানা গেছে, তিন বছর আগে দলদলিয়া ইউনিয়নের স্লুইসগেট বাজারের গণকপাড়ায় ২৯ শতক খাসজমির ওপর ১০টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালে সুফলভোগীদের ঘরগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিল। একই এলাকার চাঁদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি রাস্তার জন্য ৫ শতক জমি দান করেন। অজ্ঞাত কারণে সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। বিকল্প না থাকায় ভোগান্তি সত্ত্বেও সেখানে থাকছিলেন বাসিন্দারা।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন আনসার আলী নামে এক ব্যক্তি। প্রকল্পের ঘর নির্মাণের আগে তিনি খাস খতিয়ানের ওই জায়গাটি অবৈধভাবে ভোগদখল করে আসছিলেন। তাঁকে উচ্ছেদ করে সেখানে ঘর নির্মাণ করা হয়। এর পর থেকেই তিনি ছেলে রফিকুল ইসলামকে নিয়ে নানাভাবে আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের হয়রানি করে আসছিলেন। গত বছর ৫ আগস্টের পর বাসিন্দাদের বিতাড়িত করেন। এর পর উঠানসহ চারপাশে ধান আবাদ করেন। সম্প্রতি ঘরের দরজা-জানালা, টয়লেটের প্যানসহ সবকিছু ভেঙে ফেলেন। একটি ঘরের বারান্দার তিনটি পিলারও ভেঙে ফেলেছেন। স্থানীয়দের তোপের মুখে এক সময় নিবৃত্ত হন।
তিস্তা নদীতে সর্বস্ব হারিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় না থাকায় সুফিয়া খাতুন ও লিপি বেগম পরিবার নিয়ে আশ্রয়ণের ঘরে বসবাস করেন। এ দুই সুফলভোগী জানান, প্রকল্পের ঘরে যাতায়াতের রাস্তা, পানি, বিদ্যুৎ কিছুই নেই। কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় কষ্ট করে বসবাস করছিলেন। ৫ আগস্টের পর আনসার আলী ও তাঁর লোকজন তাদের তাড়িয়ে দিয়েছেন। ঘরের তালা ভেঙে সবকিছু তছনছ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আনসার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, আশ্রয়ণের জায়গাটি যুগ যুগ ধরে ভোগদখল করছিলাম। হঠাৎ সেখানে ঘর তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। ১০ বছর আগে এ বিষয়ে মামলা করেছি। মামলা নিষ্পত্তি না করেই ঘরের কাজ শুরু করা হয়। কিছু বলিনি। এর পরও উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমরা কাউকে ভয়ভীতি দেখাইনি। বিতাড়িত করারও প্রশ্ন আসেনা। জায়গাটি ভূতুড়ে, রাস্তা নেই। তাই বাসিন্দারা থাকেন না।
দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদেরর প্যানেল চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আনছার আলীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। তিনি আর সেখানে যাবেন না বলে কথা দিয়েছেন।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর এ বিষয়ে খোঁজ নিতে প্যানেল চেয়ারম্যান ও তহশিলদারকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম। তারা আনছার আলীর সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পেয়েছেন। তাকে সতর্ক করা হয়েছে। এর পরও সরকারি সম্পদ দখলের চেষ্টা বা নষ্ট করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি

