| Your Ads Here 100x100 |
|---|
রংপুর জেলার কয়েকটি উপজেলায় গরুর রোগ অ্যানথ্রাক্স মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে। বিশেষ করে পীরগাছা, কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় এই সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই খবর পেয়ে লালমনিরহাটে মাংস বিক্রেতা বিপাকে পড়ে গিয়েছে। তারা মাংস বিক্রি করতে পারছেন না আগের মত এবং সাধারণ মানুষ সচেতনতার দরুন মাংস গ্রহণ থেকে বিরত থাকছেন।
আক্রান্তের সংখ্যা ও শনাক্তের চিত্র
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, রংপুরে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১ জনে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে কাউনিয়ার দুইজন এবং মিঠাপুকুরের একজন বাসিন্দা নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন।
এর আগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রতিনিধি দল পীরগাছা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ৮ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং স্থানীয়দের তথ্যমতে, শুধুমাত্র পীরগাছা উপজেলাতেই অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন বা সুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। কোনো কোনো সূত্রে এ সংখ্যা ২০০ জনেরও বেশি হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে।
মৃত্যু ও সুস্থতার তথ্য, এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, তবে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত করেনি যে তাদের মৃত্যু সরাসরি অ্যানথ্রাক্সের কারণে হয়েছে কি না। মৃত ব্যক্তিরা হলেন পীরগাছা ইউনিয়নের আবদুর রাজ্জাক (৪৫) এবং পারুল ইউনিয়নের কমলা বেগম (৬০)। তারা দু’জনেই অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস কাটাকাটি বা স্পর্শ করার পরে অসুস্থ হন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়া অনেক রোগীই সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে। তবে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়া ১১ জনের মধ্যে কতজন পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত বেশিরভাগ ব্যক্তিই অসুস্থ বা মৃত গবাদিপশুর মাংস কাটাকাটি অথবা সেই মাংস স্পর্শ করার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। আইইডিসিআরের পরীক্ষায় ফ্রিজে রাখা গরুর মাংসেও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। এক নতুন ঘটনায় এক ব্যক্তি ছাগলের মাংসের সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়েছেন বলেও সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছে।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ইতোমধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজারেরও বেশি গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা দিয়েছে। তবে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক মাংস ব্যবসায়ী আইন অনুযায়ী মাংস বিক্রির লাইসেন্স বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ না নেওয়ায় রোগটি নিয়ন্ত্রণে কঠিন হচ্ছে।
রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা জানিয়েছেন, মেডিকেল টিম কাজ করছে এবং আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, যথাযথ চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। তিনি অসুস্থ পশু জবাই করা এবং এর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সকলকে পরামর্শ দিয়েছেন।
স্থানীয় খামারিরা সময়মতো ভ্যাকসিন না পাওয়ায় রোগের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত সব পশুকে ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সার্বিক পরিস্থিতিতে রোগটির বিস্তার ঠেকাতে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং গবাদিপশুর টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি

