28 C
Dhaka
মঙ্গলবার, অক্টোবর ২৮, ২০২৫

ভাতার আশায় সব শেষ ; কাজিপুর উপজেলা অন্তর্গত বাগবাটীতে ইউপি সদস্যের প্রতারণার জাল

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

 

জলিলুর রহমান জনি

 সিরাজগঞ্জ  প্রতিনিধি ;
ভিজিডি, বয়স্কভাতা, গর্ভবতী ভাতা কিংবা টিসিবি কার্ড—এই কয়েকটি শব্দ এখন কাজিপুর উপজেলার অন্তর্গত বাগবাটী ইউনিয়নের কানগাতী গ্রামে আতঙ্কের নাম। সরকারি সুবিধা পাওয়ার আশায় গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ যাঁরা সামান্য টাকার স্বপ্নে বুক বেঁধেছিলেন, আজ তাঁদের অনেকেই নিঃস্ব, প্রতারিত ও অসহায়। অভিযোগের তীর এক ব্যক্তির দিকেই—৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান।
স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, ২০২৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান নিজেকে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন। একে একে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি জানান—“ভিজিডি, বয়স্কভাতা, গর্ভবতী ও টিসিবি কার্ড আসছে। কার্ড করে দিলে প্রতি মাসে ভাতা বা পণ্য পাবেন।”
এই প্রলোভনে পড়ে কানগাতী গ্রামের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন নারী-পুরুষ মান্নান মেম্বারকে টাকা দেন। কারও কাছ থেকে এক হাজার, কারও কাছ থেকে পাঁচ হাজার—এভাবে হাতিয়ে নেওয়া হয় কয়েক লাখ টাকা।
ফাহিমা খাতুন (৩৬), ছয়জনের জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়েও আজও কোনো কার্ড পাননি।
তিনি বলেন, “মেম্বার সাহেব নিজে এসে বলেছিলেন, টাকা দিলে নাম উঠবে। বিশ্বাস করে টাকা দিলাম, এখন দরজায় গেলেই গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেন।”
একই গ্রামের লুৎফর সেখের স্ত্রী আম্বিয়াছ খাতুন জানান, “টিসিবি কার্ডের জন্য ১ হাজার টাকা দিয়েছিলাম, আজ দুই বছর হয়ে গেল—কার্ড তো দূরের কথা, নামটাই নেই।”
আরও অভিযোগ এসেছে আনুফা বেগম, ওয়াহেদ আলী, আবুল কাসেম, মজিরন ও আমিনুল ইসলামের কাছ থেকেও। তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মান্নান ভিজিডি কার্ড, আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর কিংবা ভাতা দেয়ার নাম করে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
টাকা দিয়েছি, এখন কান্না ছাড়া কিছু করার নেই।
গ্রামের বয়স্ক আবুল কাসেম (৬০) বললেন,“আমি ভাবছিলাম বয়স্কভাতা পেলে অন্তত নিজের ওষুধটা কিনতে পারব। মান্নান মেম্বার বললেন ৫ হাজার টাকা দিলে নাম উঠবে। দেইছিলাম। এখন দেখি সব মিথ্যা কথা।”
গ্রামের নারীরা বলছেন, মান্নানের এই প্রতারণায় তাঁদের সংসারে ভাঙন ধরেছে। কারও স্বামী স্ত্রীকে দোষ দিচ্ছে—কেন টাকাটা দিলেন, কেউ আবার ধারকর্জ করে ফেঁসে গেছেন দেনার জালে।
অবশেষে সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে প্রায় দুই ডজন ভুক্তভোগী পরিবার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোয়ার হোসেন বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগে তাঁরা ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ইউএনও মনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগটি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগবাটী ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মান্নানের কর্মকাণ্ডে পুরো ইউনিয়নের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাঁরা বলেন,“মানুষ এখন মেম্বারদের বিশ্বাসই করতে চায় না। সরকারি ভাতার নাম শুনলেই অনেকে ভয় পায়—আবার কেউ টাকা চাইবে না তো।
প্রতারণার শিকার অসহায় মানুষ এখন ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় দিন গুনছেন। তাঁরা বলছেন,“আমরা গরিব মানুষ, সরকারের সাহায্য পাওয়ার আশায় টাকা দিয়েছিলাম। যদি সরকারের প্রকৃত সুযোগই না পাই, তাহলে এই কার্ডগুলোর মানে কী।
একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে যেখানে সেবা ও সহযোগিতা পাওয়ার কথা, সেখানে যদি প্রতারণা ও শোষণই ঘটে—তবে সেই সমাজে আস্থা টিকিয়ে রাখা কঠিন। কানগাতী গ্রামের মানুষ এখন শুধু কার্ড নয়, চায় ন্যায়বিচার ও প্রতারকের জবাবদিহি চাই।
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

কুড়িগ্রামে সেতুর নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হয়, তবুও সেতু নির্মাণ হয়না

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নে একটি সেতুর নির্মাণ কাজের ৪ বছর মেয়াদ শেষ...