Your Ads Here 100x100 |
---|
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট ব্যবসার নামে প্রতারণা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর নতুন নামে আবারও প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে গ্রীন ডেল্টা হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেড। এবার প্রতিষ্ঠানটি ‘গোল্ডস্যান্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড’ নামে আত্মপ্রকাশ করে নতুনভাবে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রীন ডেল্টা হাউজিংয়ের মালিক ও কর্মকর্তারা নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আড়াল করতে নতুন নামে ব্যবসা শুরু করেছে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা ও পদ্মার পাড়ে নামমাত্র কিছু জমি বায়না করে সেখানে বিলাসবহুল রিসোর্ট ও হোটেলের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই প্রতারক চক্র।

গোল্ডস্যান্ডের নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারের কলাতলীতে বে স্যান্ডস, হিমছড়িতে বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস, বে হিলস, কুয়াকাটায় বে ব্রিজ এবং পদ্মার পাড়ে জাজিরা পয়েন্টে ‘দ্য গ্র্যান্ড পদ্মা রিসোর্ট’। এসব প্রকল্পের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভবিষ্যতে তাদের প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে।
গ্রীন ডেল্টা হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতারণার শিকার অনেক গ্রাহক আজ সর্বস্বান্ত। তারা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর আইনি লড়াই করেও কোনো সুফল পাননি।

প্রতারিত গ্রাহক রুমা আখতার জানান, তিনি ২০০৬ সালে রাজধানীর মতিঝিলে গ্রীন ডেল্টার একটি প্রকল্প থেকে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা পাননি। টাকা চাইলে কোম্পানির কর্মকর্তারা তাকে হুমকি দেন।
একইভাবে ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ও তার চার বন্ধু নাজির আহমেদ, ইউসুফ, মুনা এবং তুহিন ও তুহিনের স্ত্রী আফরোজা খাতুনও ফ্ল্যাট কেনার জন্য লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাদের দেওয়া টাকায় কোম্পানির মালিকরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেও তারা আজ নিঃস্ব।
গ্রীন ডেল্টার প্রতারণার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ নিলেও মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোম্পানির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ওরফে বাকের ও তার ছেলে বেলাল হোসেন বর্তমানে বিদেশে পলাতক। সূত্র জানায়, তারা নতুন প্রতারণার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় নিরাপদে রয়েছে।
কাফরুল থানায় প্রতারিত গ্রাহক নাসির উদ্দিন একটি মামলা করেছেন, যেখানে নুরুল আমিন, বেলাল হোসেন, দিলদার হোসেন, আমির হোসেনসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে মামলার অগ্রগতি নেই বললেই চলে।

নতুন কোম্পানি ‘গোল্ডস্যান্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড’ পুরনো কৌশলেই প্রতারণা করছে। প্রথমে তারা বিভিন্ন জমি বায়না করে সেখানে বিশাল রিসোর্ট ও হোটেলের প্রলোভন দেখিয়ে লোভনীয় অফার দেয়। স্বল্প মূল্যে সুইট রুম বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা হয়।
বিভিন্ন আবাসন মেলায় অংশ নিয়ে এবং চটকদার প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে আস্থা তৈরি করা হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো বাস্তব পরিকল্পনা নেই।
একজন প্রতারিত গ্রাহক বলেন, “আমি তাদের কক্সবাজার প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছিলাম। পরে জানতে পারি, যে জমিতে তারা রিসোর্ট বানানোর কথা বলছে, সেটির মালিকানাই তাদের নেই। এটি স্থানীয় কারও ব্যক্তিগত জমি, যা তারা বায়না করে রেখেছে।”
প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু মামলা করলেই হবে না, এই ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে হলে দ্রুত তদন্ত করে প্রতারকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ভবিষ্যতে কেউ যাতে এই ধরনের প্রতারণার শিকার না হন, সেজন্য ক্রেতাদেরও সতর্ক হতে হবে। কোনো আবাসন বা রিসোর্ট প্রকল্পে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই জমির মালিকানা, অনুমোদন এবং কোম্পানির বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা জরুরি।
গ্রীন ডেল্টার প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পরও প্রতারক চক্র নতুন নামে আবারও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে তারা নতুন করে ফাঁদ তৈরি করছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও হাজারো গ্রাহক প্রতারিত হবে এবং দেশের আবাসন ও পর্যটন খাতের প্রতি মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি হবে যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।