Your Ads Here 100x100 |
---|
দেশের আইনে জনপরিসর বা ‘পাবলিক প্লেসে’ ধূমপান নিষিদ্ধ। দুই তরুণীকে হেনস্তা ও মারধরের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই অপরাধ।
প্রশ্ন উঠেছে, ফুটপাতের চায়ের দোকান কি জনপরিসরের অন্তর্ভুক্ত? আইন কী বলে, তা দেখে নেওয়া যাক।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে বলা আছে, পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ। কেউ এই বিধান লঙ্ঘন করলে ৩০০ টাকা জরিমানা হবে। পুনরায় একই অপরাধ করলে দ্বিগুণ জরিমানা দিতে হবে।
আইনে পাবলিক প্লেস বলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, হাসপাতাল, আদালত, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, নৌবন্দর, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, প্রেক্ষাগৃহ, বিপণিবিতান, চতুর্দিকে দেয়ালঘেরা রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা, ও জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত যেকোনো স্থানকে বোঝানো হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আইনে ‘চতুর্দিকে দেয়াল দ্বারা আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট’কে জনপরিসর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে উন্মুক্ত চায়ের দোকান সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।
রাস্তার পাশের চায়ের দোকান জনপরিসরের আওতায় পড়বে কি না, জানতে চাইলে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, আইনে চায়ের দোকানের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তবে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ জনসমাগমস্থলে ধূমপানের পরোক্ষ প্রভাব যেন না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।
২০০৫ সালে প্রণীত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের শুরুতে প্রয়োগ ছিল কঠোর। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করা হতো এবং জরিমানা করা হতো। তবে বর্তমানে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর মতে, আইন প্রয়োগের তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও খুব কমই পরিচালিত হচ্ছে। তবে দেয়ালবেষ্টিত রেস্টুরেন্ট ও গণপরিবহনে ধূমপানের প্রবণতা কমেছে।
জনপরিসরে ধূমপান ইস্যু নতুন করে সামনে আসে গত শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় দুই তরুণীর হেনস্তা ও মারধরের ঘটনায়। অভিযোগ উঠেছে, এক ব্যক্তি চায়ের দোকানে ধূমপান করছিলেন এবং কাপের অবশিষ্ট চা ছিটিয়ে দেওয়ায় মব (একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা) দুই তরুণীকে হেনস্তা করে এবং একজনকে মারধর করে। পরে পুলিশ ওই দুই তরুণীকে হেফাজতে নেয়।
রোববার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, তাঁরা (দুই তরুণী) সিগারেট খাচ্ছিলেন, আর কিছু লোক নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন। বাধা দেওয়ার পর তাঁদের ওপর চা ছুড়ে মারা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাবলিক প্লেসে ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই অপরাধ। তাই অনুরোধ করব, কেউ যেন উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান না করেন।’
তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনসহ বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠন তাঁর বিরুদ্ধে নারীদের ওপর মব অ্যাটাককে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে।
সোমবার লালমাটিয়ায় আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে সংগঠনটি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ দাবি করে। সেখানে প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী লামিয়া ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এমন বক্তব্য দিয়ে মবকে উসকানি দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি নির্যাতিত নারীদের অপরাধই ধরা হয়, তবে সেটি সর্বোচ্চ সিভিল অফেন্স (দেওয়ানি অপরাধ)। কিন্তু তাঁদের শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা একটি ক্রিমিনাল অফেন্স (ফৌজদারি অপরাধ)। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কীভাবে একটি ক্রিমিনাল অফেন্সকে ন্যায্যতা দেন?’
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০১৫ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট ধূমপান এলাকাকে ধূমপানমুক্ত এলাকা থেকে আলাদা রাখতে হবে এবং ধোঁয়া যাতে ধূমপানমুক্ত এলাকায় প্রবেশ না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, ‘ফুটপাতের চায়ের দোকানে ধূমপান আইনত অপরাধ কি না, তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রধান কাজ।’
তিনি আরও বলেন, ‘অসংখ্য পুরুষ প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন। তাঁদের সঙ্গে কি এমন আচরণ করা হচ্ছে? যদি পুলিশ নারীদের রক্ষার্থে থানায় নিয়ে যায়, তবে যাঁরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এখানে কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ হয়েছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা জরুরি।’
সারা হোসেন আরও বলেন, ‘তরুণীরা যদি সত্যিই চা ছুড়ে মেরে থাকেন, তবে সেটির পেছনের কারণও দেখতে হবে। আজ যদি মেয়েদের ধূমপান করা কারও পছন্দ না হয়, তাহলে হয়তো একদিন কারও শাড়ি পরাও অপছন্দ হবে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
‘যে তরুণ-তরুণীরা মানবাধিকার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার, তাঁরা নিশ্চয়ই এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন,’ বলেন সারা হোসেন।