28.8 C
Dhaka
সোমবার, মে ১২, ২০২৫

ভোটেও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

 

খবরের দেশ ডেস্কঃ
 

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সব পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার কোনো সুযোগ পাবে না দলটি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দলটির নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিও রয়েছে। দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের সরকারি প্রজ্ঞাপন হাতে পাওয়ার পর নির্বাচন বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে ইসি সভা করবে।নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য বেগম জেসমিন টুলি গতকাল রবিবার এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া মানে সেই দল নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবে না। ভোটার তালিকা পাবে না, নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নও দিতে পারবে না।

ব্যালট পেপারেও ওই দলটির জন্য প্রতীক বরাদ্দ হবে না। নিবন্ধন আপাতত বহাল থাকলেও নিবন্ধিত দলের তালিকায় ওই দলটির ক্ষেত্রে ‘যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত’ কথাটি লেখা থাকবে।এদিকে নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বহাল থাকবে কি না, সে বিষয়ে দ্রুত কমিশন সভায় বসতে যাচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন গতকাল সকালে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। কাল (সোমবার) গেজেট প্রকাশিত হলে আমরা নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসব। কমিশনের আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বর্তমান বাংলাদেশের স্পিরিট বুঝেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ বিষয়ে সরকারি গেজেট পাওয়ার পর কমিশন বৈঠকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে নিবন্ধন বাতিল হবে কি না, সে বিষয়ে আইনগত দিক খতিয়ে দেখে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদারও  মনে করেন, আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। দলটি ও দলের শীর্ষ নেতারা এ দেশে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আর কোনো সুযোগ পাবে না।

গতকাল এক সংবাদ মাধ্যমের  সঙ্গে আলাপকালে তিনি তাঁর এই ধারণার কথা জানান।নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও  ১৫ বছরের শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনাকে ‘নৃশংস ইতিহাস’ আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, ‘ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগপত্র গৃহীত হয়েছে (বা হবে), একটি দুর্বৃত্তমুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টির স্বার্থে তাদের নির্বাচনী অঙ্গন থেকে দূরে রাখার কোনো বিকল্প নেই। বস্তুত এসব ভয়াবহ অপরাধীকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে পুরো জাতির, বিশেষত যাঁরা জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে চরম আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সমতুল্য হবে বলে আমরা মনে করি।’

আইনে যা রয়েছে : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ অনুযায়ী, কোনো দলকে নিজেদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে নিবন্ধন পেতে হয়। আরপিওর ৯০ জ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কী কারণে কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। এগুলো হচ্ছে (ক) দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি, সেটি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, সেই কমিটি যদি দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বা নিবন্ধন বাতিলের জন্য দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা তাঁদের সমপর্যায়ের পদাধিকারী ব্যক্তি কর্তৃক দলীয় সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীসহ কমিশন বরাবর আবেদন করে; (খ) নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধঘোষিত হয়; (গ) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও বিধিমালার অধীন কমিশনে প্রেরিতব্য কোনো তথ্য [একাদিক্রমে তিন বছর] প্রেরণ করতে যদি কোনো দল ব্যর্থ হয়; (ঘ) কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক [অনুচ্ছেদ ৯০খ-এর দফা (১) (খ)] (এ দফায় নিবন্ধন পাওয়ার শর্তগুলো উল্লেখ রয়েছে) এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করা হয় এবং (ঙ) কোনো রাজনৈতিক দল পর পর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের ক্ষেত্রে ‘নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণার বিধানটি আলোচনায় আসতে পারে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দলটিকে নিষিদ্ধ নয়, যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধের কথা বলেছে।

এর আগে বাতিল হয় পাঁচটি দলের নিবন্ধন : নির্বাচন কমিশনে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে দল নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আদালতের নির্দেশে এবি পার্টি নিবন্ধন পায়। এ ছাড়া নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলনের নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) ও মাইনরিটি জনতা পার্টি। এ অবস্থায় এখন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০।

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আইন সংশোধন : অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’ বলা হলেও ওই আইনে এ ধরনের কোনো বিধান রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ অবস্থায় গতকাল বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে এমন ব্যক্তি বা সত্তার এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এই খসড়া অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ।

এই সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সরকার কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রয়েছে মর্মে যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে। তবে বর্তমান আইনে কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো বিধান নেই। উক্ত বিষয়টি স্পষ্টীকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হেতু সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে উক্ত আইনের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজন। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় অভিযোজন করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধকরণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ আগামীকাল সংশোধনীটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হতে পারে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিত উল্লেখ করা হয়। গতকালই এই সংশোধনী অধ্যাদেশটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গত শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দলটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠক শেষে রাত ১১টার দিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সরকার নেতিবাচক আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আশা করে না : আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে সরকার আন্তর্জাতিকভাবে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কেমন হবে জানতে চাইলে প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বিশ্বের কোথাও এমন একটি খুনি, গণতন্ত্রবিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত দলের পক্ষে কেউ কথা বলবে না। তাই আমরা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা নিয়ে বিশ্ব শোক প্রকাশ করবে বলে আমি মনে করি না।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও মানবতাবিরোধী অপরাধ বা জাতীয় স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের জন্য কেবল কোনো দলের কার্যক্রম নয়, পুরো রাজনৈতিক দলকেই নিষিদ্ধ করতে দেখেছি।’ উদাহরণস্বরূপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ও ইতালিতে নািস ও ফ্যাসিস্ট দলগুলো নিষিদ্ধ করার কথা উল্লেখ করেন শফিকুল আলম। এ ছাড়া স্পেন ও বেলজিয়ামে কিছু দল বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আ. লীগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবি : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ক্ষমতাচ্যুত দলটিকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা, ‘জুলাই সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন এবং ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার দাবিতে গতকাল আবারও শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন অভ্যুত্থানে আহতরা এবং নিহতদের পরিবারের শ দুয়েক সদস্য। দুপুর থেকে তাঁরা শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

 

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

অপারেশন সিঁদুর: নরেন্দ্র মোদি রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন

খবরের দেশ ডেস্কঃ কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর চারদিনের অপারেশন সিঁদুর নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন...