Your Ads Here 100x100 |
---|
ফারুক আহমেদের জায়গায় আমিনুল ইসলাম বুলবুল– দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিসিবি সভাপতি পরিবর্তনের একটা জোড় গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে। ইউটিউবারদের জন্য ‘হট টপিক’ হয়ে উঠেছে বিষয়টি। ফেসবুকে বুলবুলকে নিয়ে খুব চর্চা হচ্ছে কিছুদিন হলো। যেটা বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকেও ভাবাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবরও করেছেন বোর্ড সভাপতি। জাতীয় দলের সাবেক এক অধিনায়ক জানান, বুলবুলকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনকালীন সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে দেওয়া হয়েছে।
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চাকরিতে বহাল থেকে তিন মাসের জন্য নির্বাচনকালীন সভাপতি হতে বুলবুল রাজি হয়েছেন বলে জানান বিসিবির একজন পরিচালক। সম্প্রতি ব্যক্তিগত কাজে বুলবুলের দেশে ফেরার কথা। তাঁর দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিসিবি সভাপতি হওয়ার বিষয়টি দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাচ্ছেন অনেকে।
বুলবুলকে নির্বাচনকালীন সভাপতি করতে হলে ৩০ সেপ্টেম্বরের পরে করতে হবে। কারণ, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মেয়াদ পূর্তির পর নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে চায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ফারুক আহমেদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় এই বিকল্প চিন্তা এনএসসির।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে পরিষ্কার করে কিছু বলতে রাজি হননি কর্মকর্তারা। এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রেস সেক্রেটারি মাহফুজুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা মহোদয় দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে বুলবুল ভাইকে বলে থাকতে পারেন।’ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যে পরিকল্পনা করছেন, তা বাস্তবায়ন হলে নির্বাচন নিয়ে বিসিবির বর্তমান কর্মকর্তাদের লম্ফঝম্ফ কোনো কাজে আসবে না। কারণ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কাউন্সিলর তালিকা প্রণয়ন করবে অ্যাডহক কমিটি।
বিসিবির বর্তমান কর্মকর্তারা সেদিকে না তাকিয়ে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে টানাটানি শুরু করেছেন। লড়াইটা হচ্ছে মূলত ক্লাব ক্যাটেগরিতে। ঢাকার ৭৬টি ক্লাব বিসিবির কাউন্সিলর। বিসিবির সাবেক পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকের নিয়ন্ত্রণে ছিল ৪৫ থেকে ৫০টির মতো ক্লাব। মল্লিক সরাসরি ২২টি ক্লাবের মালিক ছিলেন। আর্থিক অনুদান দিতেন আরও ১৩ থেকে ১৫টি ক্লাবকে।
বেক্সিমকো গ্রুপের পাঁচটি এবং গাজী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ছয়টি ক্লাব মল্লিক নিয়ন্ত্রণ করতেন। ৫ আগস্টের পর তিনি পালিয়ে যাওয়ায় তাঁর ক্লাবগুলোর দখল পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন অনেকে। অভিযোগ আছে, একটি বড় শিল্প গ্রুপ সাত থেকে আটটি ক্লাব কিনেছে। আগে থেকে তিনটি ক্রিকেট ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক তারা। সব মিলিয়ে ১১টি ক্লাবের মালিকানা কোম্পানিটির হাতে বলে দাবি এক ক্রিকেট সংগঠকের।
ক্রিকেটপাড়ায় গুঞ্জন, নির্বাচনে বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের সমর্থনে কাজ করবেন তারা। এ ছাড়া গাজী গ্রুপের হাতে থাকা ছয়টি ভোটও ফারুকের বাক্সে পড়ার সম্ভাবনা বেশি বলে দাবি ওই সংগঠকের। লুৎফর রহমান বাদলের হাতেও তিনটি কাউন্সিলরশিপ থাকবে। মল্লিকের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা চারটি ক্লাব তানভীর আহমেদের মালিকানায় কমিটির তালিকা ফারুকের নির্দেশনায় সিসিডিএম গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
ক্লাব নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিযোগ তিন পরিচালক ইফতেখার রহমান, মাহাবুবুল আনাম আর ফাহিম সিনহার বিরুদ্ধেও। এ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালে বাছাই লিগ খেলে তৃতীয় বিভাগে উন্নীত হওয়া ১৫টি ক্লাব কেনার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। অভিযোগ হলো, তারা মল্লিকের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ক্লাব কিনেছেন। এই তিন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি অস্বীকার করেন তারা।
একজন ক্রিকেট কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদকে যে উদ্দেশ্যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তা সফল হবে না। কারণ, যাদের নাম জড়ানো হয়েছে, তারা ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। বেক্সিমকো গ্রুপ এবং মল্লিকের কাছ থেকে ক্লাব কিনেছে একটি শিল্প গ্রুপ সভাপতিকে নির্বাচনে সমর্থন দেওয়ার জন্য। আমরা জেনেছি, ১৫টি ক্লাবের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেছেন বোর্ড সভাপতি, যাতে ক্লাবগুলো বাতিল হয়। বাদ হলে ভোট কমবে। তখন ভোটে প্যানেল ও লড়াই করা সহজ হবে তাঁর জন্য।’
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এই অভিযোগ অনেক আগেই প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে কোনো কারণে ক্লাবগুলোর নিবন্ধন ও ভোটাধিকার বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে। আসলে ভোটের রাজনীতি সামনে রেখে কাদা ছোড়াছুড়ি বেড়ে যাওয়ায় মাঠের ক্রিকেট থেকে ফোকাস সরে গেছে কর্মকর্তাদের। সভাপতি এবং পরিচালকদের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্বের প্রভাব ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করছে বলে দাবি একজন পরিচালকের।