18 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৫

হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
খবরের দেশ ডেস্ক :
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের ন্যাক্কারজনক হামলার অভিযোগ এনে এ ঘটনায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া ও হল বন্ধের নোটিশ প্রত্যাহারসহ ৬ দফা দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা (বাকৃবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত রবিবার কম্বাইন্ড (বি.এসসি ইন ভেটেরিনারি ও এএইচ) ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলায় অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন। এ ঘটনার পর বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে। পরে রাত সাড়ে  ৯টায় অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে নারী শিক্ষার্থীদের একাংশ হল ছাড়লেও বেশিরভাগ ছাত্রই হল ছাড়েননি। সোমবার সকাল ৯টা থেকে কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা।

 

সকাল থেকে সবগুলো ছাত্র হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে মিছিল নিয়ে ছাত্রীহলগুলো প্রদক্ষিণ করেন।
এসময় তারা নারী শিক্ষার্থীদের হল থেকে না বের হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। এরপর তারা কে আর মার্কেট সংলগ্ন সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসময় তারা ‘কথায় কথায় হল ছাড়, হল কি তোর বাপ দাদার’ ; ‘প্রশাসনের চামড়া, তুলে নেব আমরা’ ; ‘ক্যাম্পাসে হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’ ; ‘আমার ভাইকে মারলো কেন, বিচার চাই চাই’ সহ নানা প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন।

 

এরপর সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এসে জমা হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।

এসময় তারা প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন এবং প্রেফ ব্রিফিং চলাকালীন ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন।

 

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—
১. অবৈধভাবে হল বন্ধের নির্দেশনা দুপুর ২টার মধ্যে প্রত্যাহার করে আদেশ তুলে নিতে হবে।
২. হলগুলোতে চলমান সব ধরনের সুবিধা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
৩. এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের মদদে বহিরাগত দিয়ে হামলার দায়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।
৪. বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং দেশীয় অস্ত্র দ্বারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্থার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

 

৫. হামলার সাথে জড়িত শিক্ষকবৃন্দ- কৃষি অনুষদের আসাদুজ্জামান সরকার, তোজাজ্জল স্যার, শরীফ আর রাফি স্যার, কামরুজ্জামান স্যার, পশুপালন অনুষদের বজলুর রহমান মোল্লা; জেনেটিক্স এর মুনির স্যার; ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের আশিকুর রহমান স্যার এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. গত ১ মাস ধরে চলমান যে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন করে আসছি, সেই একক ডিগ্রি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে। তিনটি ভিন্ন ডিগ্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী এহসানুল হক হিমেল জানান, গতকাল ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সামনে বহিরাগতরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এরপর শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে হল ত্যাগের নির্দেশ দিচ্ছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে প্রশাসন যে রকম আচরণ করেছে, ঠিক সেই রকম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে আচরণ করছে। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বহিরাগতদের দ্বারা আমা‌দের মারধর ও ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। আমরা এখন নিরাপদ নই, প্রবল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

পশু পালন অনুষদের শিক্ষার্থী ফারিছা হক বলেন, আমাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করেই প্রশাসন হল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা পিছিয়ে যাওয়ার জন্য আসিনি, আমরা পালিয়ে যাওয়ার জন্য আসিনি। আমাদের ওপর যে হামলা করা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এই ৬ দফা দাবি দেওয়া হয়েছে সে দাবিগুলো মেনে নেওয়া হোক।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা আড়াই শতাধিক শিক্ষক আন্তরিকতার সাথে শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়েছি। শতভাগ দাবি মেনে নেওয়ার পরেও কেন তারা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করলো, সেটি আমার প্রশ্ন। অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকরা প্যানিকড ও ট্রমায় পড়ে যান। পরে কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা, নিরাপত্তারক্ষীরা তালা ভেঙে শিক্ষকদের বের করতে সাহায্য করেন।’

বহিরাগতদের হামলার বিষয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে দাবি করছে শিক্ষকেরা বহিরাগতদের দিয়ে তাদের ওপর হামলা করেছে, এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমরা বাইরের কাউকে বলিনি ক্যাম্পাসে আসতে, আমরা কেন বলবো? ছাত্রছাত্রীরা তো আমাদের ছেলে মেয়ের মতো।’

ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, বিবিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ভাঙচুরের বিষয়ে আমি অবশ্যই কমিটি করবো।’

উপাচার্যের ক্ষমা চাওয়ার দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কেন ক্ষমা চাইব? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি।’

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে হত্যাকাণ্ড: ঘটনার ৬০ ঘণ্টা পর গৃহকর্মী আয়েশা ও তার স্বামী গ্রেপ্তার

ঢাকার মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল (১৫) হত্যাকাণ্ডের প্রায় আড়াই দিন পর গৃহকর্মী...