- Advertisement -
| Your Ads Here 100x100 |
|---|
খেলা ডেস্ক :
একজন ওপেনারের ঘাটতি পাকিস্তানের জন্য ছিল বড় সমস্যা। সেই ঘাটতি পূরণ করতেই আবির্ভাব ঘটে সাঈদ আনোয়ারের। বাঁহাতি এই ব্যাটার দ্রুতই প্রমাণ করেন, তিনি শুধুই রান সংগ্রাহক নন, বরং পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে স্থিতিশীলতা এনে দিতে সক্ষম। তার খেলার ধরণ ছিল সহজ কিন্তু মার্জিত। বলের গতি আর লাইনে চোখ রেখে টাইমিংয়ের মাধ্যমে যে রান তুলতেন, তা দেখার মতো। মাত্র তৃতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯ রানের দাপুটে ইনিংস খেলে দলের ওপরে আস্থা বাড়িয়ে দেন বহুগুণ। সেখান থেকেই শুরু হয় তার কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্প।
একদিনের ক্রিকেটে তার ধারাবাহিকতাই তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে। টানা তিন ম্যাচে তিন সেঞ্চুরির সেই রেকর্ড, যা তার সময়টায় ছিল প্রায় অসম্ভব এক কীর্তি। স্বদেশী জহির আব্বাসের পর পাকিস্তানের হয়ে তিনিই দেখিয়েছিলেন এরকম ধারাবাহিকতার নজির। আর আনোয়ারের পর প্রায় এক দশক কেউ পারল না সেই পথ ধরে হাঁটতে। ক্রিকেটের পরিসংখ্যানে এই রেকর্ড আজও আলো ছড়ায়। কারণ সে সময়কার উইকেট, বোলার আর পরিস্থিতি ছিল ভয়ংকর চ্যালেঞ্জিং।
কিন্তু যা তাকে কিংবদন্তি বানিয়েছে, তা হলো চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ১৯৯৭ সালের ১৯৪ রানের ইনিংস। মাত্র ১৪৬ বলে গড়া সেই রেকর্ড অক্ষত ছিল দীর্ঘ ১৩ বছর। পাকিস্তান জিতেছিল ইন্ডিপেনডেন্স কাপ, আর আনোয়ারের নাম লেখা হয়ে যায় ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে। সেই দিনের পর ভারতীয় দর্শকরাও তার ব্যাটিংকে শ্রদ্ধা করতে শুরু করে। কারণ প্রতিপক্ষ হয়েও তিনি মুগ্ধ করেছিলেন পুরো চেন্নাইকে।
আনোয়ার ছিলেন সত্যিকারের ম্যাচ জেতানো ব্যাটসম্যান। তার ২০টি সেঞ্চুরির মধ্যে পাকিস্তান জয় পেয়েছে ১৭টিতেই। সহজ সমীকরণ ছিল—যেদিন আনোয়ার ব্যাট হাসাতেন, সেদিন পাকিস্তানও হাসত। তার ব্যাটিং ছিল দলের জন্য একপ্রকার জীবনদায়ী সঞ্চার। যেন তিনি ছিলেন জয়ের গোপন সমীকরণ।
বিশ্বকাপের মঞ্চেও তিনি ছিলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ভরসা। ১৯৯৬, ১৯৯৯ আর ২০০৩—প্রতিটি আসরেই তিনি দলটির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ইতিহাসে এমন ধারাবাহিকতা আর কারও নেই, যারা টানা তিন বিশ্বকাপে দেশের হয়ে সেরা রান সংগ্রাহকের আসন ধরে রেখেছেন। বড় মঞ্চে সেরা হওয়া মানে বড় ব্যাটসম্যান হওয়া—আনোয়ার সেই প্রমাণ রেখে গেছেন। তাই বিশ্বকাপ মানেই ছিল তার ব্যাট থেকে রান ঝরা।
তার ব্যাটিংয়ে ছিল সৌন্দর্য, ছিল শক্তি, ছিল শৈল্পিকতার অনন্য ছোঁয়া। শুধু রান করাই নয়, দর্শককে মুগ্ধ করাটাই যেন ছিল তার মূল লক্ষ্য। তিনি রান করতেন কবিতার মতো, স্ট্রোক খেলার মধ্যে থাকত রূপকথার সৌন্দর্য। তাই ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকে আজও “স্টাইলের রাজা” বলে ডাকে।

