| Your Ads Here 100x100 |
|---|
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার জিকেএস হাসপাতালের উত্তর পাশে দাঁড়িয়ে আছে চারতলা বিশাল এক ভবন। নাম তার—উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও সামাজিক-সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু আজ ভবনটি যেন এক পরিত্যক্ত ভুতুড়ে স্থাপনা। উদ্বোধনের পর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পদচারণা সেখানে নেই বললেই চলে। সারা বছর তালাবদ্ধ থেকে ধুলোবালি আর ময়লার স্তূপে ভরে যাচ্ছে কোটি টাকার এই স্থাপনাটি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে আনুমানিক ২.৫ থেকে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ২০২৩ সালের ২৮ মে ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় দোকানের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো এখনও খোলেনি। তৃতীয় তলায় রয়েছে আধুনিক অফিস কক্ষ ও বিশাল কনফারেন্স রুম। সেখানে উন্নতমানের আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আধুনিক সুবিধার ব্যবস্থা করা হলেও ব্যবহার না হওয়ার কারণে সেগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তাড়াশের একাধিক মুক্তিযোদ্ধা জানান, ভবনটি নির্মাণে সঠিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, বয়সের ভারে ন্যুব্জ অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধার জন্য তৃতীয় তলায় ওঠা কষ্টকর। ভবনে লিফট না থাকায় সিঁড়ি বেয়ে উঠা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ভবনটি উপজেলা বাজার থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় অনেকেই সেখানে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন।
তাঁরা আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ হলেও ব্যবহার না হওয়ায় তাঁরা প্রত্যাশিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অভ্যন্তরীণ বিভক্তি ও সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা ঘটানোর মতো পরিবেশও সৃষ্টি হয়নি।
এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ভবন নির্মাণ করা হলেও ব্যবহার না হওয়ায় এটি এখন সম্পদের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।” তাঁদের মতে, পরিকল্পনার ঘাটতি ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকায় ভবনটি ধীরে ধীরে অচল হয়ে যাচ্ছে।
এখন ভবনটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে মাসের পর মাস। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, জমে থাকা ধুলোবালি ও ময়লায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান আসবাবপত্র। ফলে সরকারিভাবে যে উদ্দেশ্যে এত টাকা ব্যয় করা হয়েছিল, তা বাস্তবে সফল হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গড়া এই স্থাপনাই আজ তাঁদের কাছে অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাপ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জলিলুর রহমান জনি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

