| Your Ads Here 100x100 |
|---|
মানুষের জীবনে সাফল্য আসে ধৈর্য, পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে। কেউ জন্ম থেকেই সচ্ছল হয় না, আবার কেউ সংগ্রামের পথে শূন্য থেকে শুরু করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। যাঁরা কষ্টকে জয় করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেন, তাঁদের জীবন সমাজের জন্য অনুকরণীয় হয়ে ওঠে।নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার শালবাড়ী (ডাঙ্গাপাড়া) গ্রামের ইলিয়াস আলী তেমনই একজন সংগ্রামী ও সফল মানুষ, যিনি আজ তাঁর গ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় রোল মডেল হিসেবে পরিচিত।ইলিয়াস আলীর জন্ম হয় এক সাধারণ পরিবারে। তাঁর পিতা মরহুম আলি হোসেন (বুচিকা) ছিলেন একজন পরিশ্রমী মানুষ। সংসার চালানোর জন্য তিনি সারাজীবন পরিশ্রম করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তিনি ছেলের এ সচ্ছল সংসার ও প্রতিষ্ঠিত জীবন দেখে যেতে পারেননি। ইলিয়াস আলী ছোটবেলা থেকেই পরিবারের অভাব-অনটন দেখেছেন। সংসারে ছিল ৩ ভাই ও ৪ বোন। সীমিত আয়, বড় পরিবার ও নানা আর্থিক সংকটের কারণে তাঁর শৈশব কেটেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এসব প্রতিবন্ধকতা তাঁকে নিরুৎসাহ করতে পারেনি। বরং ছোটবেলা থেকেই তিনি দায়িত্বশীল ও পরিশ্রমী হওয়ার মানসিকতা অর্জন করেন।যুবক বয়সে ইলিয়াস আলী বুঝতে পারেন, দারিদ্র্য দূর করতে হলে পরিশ্রমই একমাত্র পথ। তিনি ব্যবসা শুরু করেন খুব সামান্য মূলধন দিয়ে। শুরুটা ছিল ছোট পরিসরে, কিন্তু সততা, অধ্যবসায়, দূরদর্শিতা ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় হতে থাকে। তাঁর মূল শক্তি ছিল সততা ও ধৈর্য। ব্যবসার প্রতিটি ধাপে তিনি মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। আর এই আস্থাই তাঁর ব্যবসার বিস্তারে সবচেয়ে বড় অবলম্বন হয়ে ওঠে।আজ ইলিয়াস আলী একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও তিনি কখনো অহংকারে ভর করেননি। বরং সহজ-সরল জীবনধারা বজায় রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি শুধু পরিবারের জন্যই নন, গ্রামের মানুষের জন্যও একজন প্রকৃত অভিভাবক হয়ে উঠেছেন। তাঁর এই মানবিক গুণাবলীই তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে অনন্য করে তুলেছে।ইলিয়াস আলীর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি কাউকে ছেড়ে যাননি। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে নিজের শেকড় ভুলে যায়। কিন্তু ইলিয়াস আলী ব্যতিক্রম। তিনি তাঁর পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের মানুষকে নিজের সামর্থ্যের মধ্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কেউ বিপদে পড়লে ইলিয়াস আলী এগিয়ে আসেন, আবার গ্রামের উন্নয়নমূলক কাজেও তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। ফলে শালবাড়ী গ্রামসহ আশেপাশের মানুষ তাঁকে শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবেই নয়, একজন দয়ালু ও দায়িত্বশীল সমাজসেবক হিসেবেও দেখে।বর্তমান সময়ে সমাজে এমন রোল মডেলের খুব প্রয়োজন। কারণ আজকের তরুণ সমাজ প্রায়শই হতাশ হয়ে পড়ে, সামান্য প্রতিবন্ধকতা আসলেই পিছিয়ে যায়। কিন্তু ইলিয়াস আলীর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয়—দারিদ্র্য বা কষ্ট কখনো বাধা নয়, বরং এগুলোই সাফল্যের পথে দৃঢ় ভিত্তি গড়ে দেয়। যদি তরুণ প্রজন্ম তাঁর জীবনের সংগ্রাম ও সাফল্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, তবে তারা নিজেদের জীবনেও সফল হতে পারবে।ইলিয়াস আলীর জীবন আমাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়—সফল হলেও দায়িত্ব থেকে পলায়ন করা যায় না। পরিবার, সমাজ ও আশেপাশের মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল থেকে সাফল্যের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারলেই প্রকৃত অর্থে মানুষ বড় হয়ে ওঠে। তাঁর মতো ব্যক্তিদের অনুকরণ করলে আমাদের সমাজ আরও আলোকিত, সমৃদ্ধ ও উন্নত হতে বাধ্য।
সবশেষে বলা যায়, শালবাড়ী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ইলিয়াস আলী শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী নন, তিনি একজন অনুকরণীয় মানুষ। তাঁর সততা, পরিশ্রম, দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি ইলিয়াস আলীর মতো হতে চেষ্টা করে, তবে আমাদের সমাজ আরও সুন্দর হবে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, ইলিয়াস আলী আমাদের সমাজের প্রকৃত রোল মডেল।
এম,এ,মান্নান,নিয়ামতপুর (নওগাঁ)

