18 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৫

কুড়িগ্রামে বেড়েছে নদী ভাঙ্গন, পাউবোর বরাদ্দের অপেক্ষায় তীরবর্তী মানুষ

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100


আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
নদী ভাঙনের কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলা। প্রতি বছর বর্ষাকালে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদ-নদীর তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। যদিও বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে, তবু নতুন করে নদীর ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বছরই পাঁচ শতাধিক পরিবার নদীভাঙনে বসতঘর হারিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভাঙনকবলিত নয়টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাকি পয়েন্টগুলোতেও কাজ করা হবে।
কুড়িগ্রাম জেলার সাড়ে চার শতাধিক চরে প্রায় দুই হাজার পরিবার প্রতি বছর নদী ভাঙনে বসত হারায়। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-২০২২ সালের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর ভাঙনে ১৫ হাজার পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এ বছর ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী ও রাজিবপুরে ৪৪৭টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। রৌমারীর সোনাপুরে শতাধিক পরিবার, রাজারহাটে তিস্তার ভাঙনে ৬৩টি ও ফুলবাড়ীর ধরলা নদীর ভাঙনে ছয়টি পরিবার বসত হারিয়েছে। এসব পরিবার বর্তমানে অন্যের জমি বা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই মাথা গোঁজার জায়গা না পেয়ে অন্যত্র চলে গেছে।
নদী তীরের বাসিন্দারা বলছেন, বর্ষার শেষ সময়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও গাছপালা। সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি ওঠানামা করেছে। পানি কমতে থাকায় দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার ভাঙন আরও বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া, নাগেশ্বরীর বল্লভের খাস, রৌমারীর সোনাপুরসহ ফুলবাড়ি ও চিলমারী এলাকায় অন্তত ১৫টি পয়েন্টে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ২০টি পরিবার নতুন করে বসতঘর হারিয়েছে। শত শত ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও বাজারঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বানিয়া পাড়ার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম (৭০) বলেন, আমার বাড়ি নদীর কিনারে। অর্ধেক বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি, বাকি অর্ধেকও সরিয়ে নিতে হবে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাসের লেবু মিয়া (৬০) জানান, দুধকুমার নদীর ভাঙনে শত শত বিঘা জমি বিলীন হয়েছে, অনেকেই ঘরও হারিয়েছে। বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর চর গোরকমণ্ডপ এলাকার ধরলা নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত নুরনবী (৫৫) বলেন, গত এক মাসে গ্রামের ১৫টি ঘরবাড়ি ও জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমরা কোথায় যাব জানি না।
সালেকা বেগম (৬০) বলেন, বাবা-মায়ের কবর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সরকার ব্যবস্থা না নিলে গ্রামে থাকা সম্ভব হবে না।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল গফুর জানালেন, ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে বানিয়াপাড়া ও সবুজপাড়ার শতাধিক বাড়ি বিলীন হয়েছে।
সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিস্তার ভাঙনে দাড়িয়ারপার গ্রামের মানুষ বারবার ঠিকানা বদলাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, উজান থেকে বালি-পলি এসে নদীতে ডুবোচর সৃষ্টি করছে। পানি ও বালির আঘাত গতি পরিবর্তন করায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে। ড্রেজিং না করলে ভাঙন বন্ধ হবে না।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল হাসান বলেন, বর্ষার শেষ সময়ে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীতে নতুন করে ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নয়টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বাকিতেও কাজ হবে। এর আগে ৪৫টি পয়েন্টে কাজ করা হয়েছে।
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে হত্যাকাণ্ড: ঘটনার ৬০ ঘণ্টা পর গৃহকর্মী আয়েশা ও তার স্বামী গ্রেপ্তার

ঢাকার মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল (১৫) হত্যাকাণ্ডের প্রায় আড়াই দিন পর গৃহকর্মী...