- Advertisement -
Your Ads Here 100x100 |
---|
খবরের দেশ ডেস্ক :
ভারতের তরুণ প্রজন্ম—জেনারেশন জেড বা সংক্ষেপে ‘জেন–জি’। ২৫ বছরের নিচে এ বয়সসীমায় পড়ছে প্রায় ৩৭ কোটি তরুণ–তরুণী, যা ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক–চতুর্থাংশ। অস্থির, সচেতন, ডিজিটালি সংযুক্ত—এই প্রজন্ম রাজনীতি, দুর্নীতি ও বৈষম্য সম্পর্কে প্রতিদিনই খবর রাখে, কিন্তু রাস্তায় নামতে ভয় পায়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘দেশবিরোধী’ তকমা পাওয়ার আশঙ্কা, জাত–ভিত্তিক বিভাজন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, আর ‘প্রতিবাদ করেও কিছু হবে না’—এই মানসিকতা ভারতের তরুণ সমাজকে নীরব করে রেখেছে।
এশিয়া ও আফ্রিকার একাধিক দেশে কিন্তু একই বয়সের তরুণরা এখন পরিবর্তনের মুখ্য চালিকাশক্তি।নেপালে গত মাসেই জেন–জিদের নেতৃত্বে বিক্ষোভে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার পতন হয়েছে।
মাদাগাস্কারে তরুণ নেতৃত্বে সরকার বদল হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় চাকরির সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ তরুণেরা দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সরকারের কাছ থেকে ছাড় আদায় করেছেন।
বাংলাদেশেও গত বছর কোটাব্যবস্থা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে তরুণদের আন্দোলন সরকার পতনের দিকে ঠেলে দেয়।
তবে ভারতের চিত্র একেবারেই আলাদা—এখানে তরুণদের প্রতিবাদ যেন ইন্টারনেটেই সীমাবদ্ধ।
গত সেপ্টেম্বরেই লাদাখে রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুক এ ঘটনাকে ‘জেন–জিদের দীর্ঘদিনের দমিয়ে রাখা ক্ষোভের বিস্ফোরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
বিক্ষোভের পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে লিখেছেন,
“জেন–জি তরুণেরা ভোট জালিয়াতি ঠেকাবেন এবং সংবিধান রক্ষা করবেন।”
কিন্তু এ আহ্বানও তেমন সাড়া পায়নি। দিল্লির পুলিশপ্রধান অবশ্য রাজধানীতে সম্ভাব্য তরুণ বিক্ষোভের জন্য বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিট ও এক্সে তরুণদের মধ্যে চলছে তীব্র বিতর্ক।
একপক্ষ মনে করে, নেপালের মতো পরিবর্তন দরকার ভারতেরও; অন্যপক্ষ নেপালের সহিংসতাকে সামনে এনে এমন আন্দোলনের বিপক্ষে সতর্ক করছে।
তথ্যযাচাই সংস্থা BoomLive বলছে, “জেন–জিদের মধ্যেই চলছে অনলাইন যুদ্ধ—ন্যায়বিচারের দাবির লড়াই, না বিদেশি প্রভাবের প্রচার—তা নিয়েই বিভক্ত তারা।”
ভারতের তরুণ সমাজ একসূত্রে বাঁধা নয়।‘সেন্টার ফর ইয়ুথ পলিসি’র বিশেষজ্ঞ সুধাংশু কৌশিক বলেন,
“ভারতে তরুণেরা রাজ্য, ভাষা ও জাতিগত পরিচয়ে এতটাই বিভক্ত যে তাদের একত্র করা কঠিন।”
তিনি আরও বলেন,
“ধরা যাক আন্দোলন হলো—তাহলে সেটা দলিত তরুণদের, শহুরে তরুণদের না তামিলভাষী তরুণদের? এটাই ভারতের বাস্তবতা।”
শহুরে তরুণেরা চাকরির সুযোগ নিয়ে সোচ্চার, দলিত তরুণেরা সামাজিক ন্যায়বিচার চায়, তামিল তরুণেরা সংস্কৃতি ও ভাষার অধিকার রক্ষায় রাস্তায় নামে।
একটি জাতীয় ইস্যুতে ঐক্য নেই—এটাই ভারতীয় তরুণদের দুর্বলতা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ধৈর্য চৌধুরী বলেন,
“সবচেয়ে সচেতন তরুণেরাও রাস্তায় নামতে ভয় পান—‘দেশবিরোধী’ তকমা লাগার ভয়ে।”
রাজনৈতিক বিতর্কের প্রাণকেন্দ্র ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, সেগুলোর অনেকেই এখন বিক্ষোভে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গবেষক হাজারা নাজিব মন্তব্য করেছেন,
“একসময় যে ক্যাম্পাসগুলো সরকারের সমালোচনার কেন্দ্র ছিল, সেগুলো এখন নীরব।”