26 C
Dhaka
রবিবার, অক্টোবর ২৬, ২০২৫

২৯ বছর পর নতুন তথ্য দিলেন দুঃ’খী’নি মা নীলা চৌধুরী

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

 

দীর্ঘ ২৯ বছর আগে চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এরফলে আত্মহত্যা নয়, হত্যাকাণ্ড হিসেবে মামলাটি কার্যক্রম চলবে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রয়াতের মা নীলা চৌধুরী। আদালতের এ নির্দেশের পর তিনি কথা বলেছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজ ডিজিটালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: আদালতের এই নিদের্শনা সালমান শাহের পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য বিশেষ প্রাপ্তি। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
নীলা চৌধুরী: কালকে রায় আমাকে বলে দিয়েছে যে, সালমান শাহ আবার জন্ম নিল! সালমান শাহকে খুন করা হয়েছে, আদালত তা স্বীকার করে নিয়েছে। জান্নাতুল ফেরদৌস যেভাবে এই রায়টি পড়ে শুনালেন, আমি জীবনে এমন দৃশ্য দেখিনি। সকাল ৮টা-৯টা থেকে বিকেল ৩টা-৪টা পর্যন্ত আদালতের ভেতরের পরিবেশটা ছিল অবিশ্বাস্য। আমি অনলাইনে পুরোটা দেখেছি-মনে হচ্ছিল, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। রায়ে বলা হয়, ১১-১২টা সিরিঞ্জ (সালমান শাহের বাসায়) পাওয়া গেছে। আমি তখন এক আমেরিকান ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছিলেন, ‘একটা মানুষকে যদি ফাঁকা সিরিঞ্জ দিয়ে দু-তিনবার ইনজেকশন দেওয়া হয়, তাহলেও মৃত্যু হতে পারে।’ অথচ ওরা একাধিকবার ব্যবহার করেছিল! তৎকালীন সময়ে, নয় দিন পরে যখন আমরা ঘরে ঢুকি, তখন এসব জিনিস পাই।
প্রশ্ন: এটা তো আপনার দীর্ঘ লড়াই। এই পর্যায়ে নিশ্চয়ই স্বস্তি দিচ্ছে?
নীলা চৌধুরী: অনুভূতি বলতে কী বাবা, আজকে আর অনুভূতির কিছু নেই। এখন মনে হচ্ছে যেন (সালমান শাহ) মারা গেছে। এতদিন তো আমি যুদ্ধ করেছি। আমার ছেলে মরে নাই। আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। ওরা বলছে মরে গেছে। আমি একটু বিতর্কের মধ্যে ছিলাম। আমি কাঁদতে পারি নাই। আমাকে চরিত্রহীন করা হয়েছে ২৯ বছর। আমি যা নই, তা-ই করা হয়েছে। আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। বলছে যে, ‘সালমান তার মাকে ভালোবাসতো বিধায় টানাপোড়েন। মায়ের কারণে আত্মহত্যা করেছে।’ একটা কথা সত্য, সালমান আমাকে ভালোবাসতো। মাকে খুব ভালোবাসতো। মরে গেছে এটা ভুল। মাকে ভালোবাসলে সেই সন্তান মরতে পারে না। কোন ক্ষতির কাজ করতে পারে না। মারা গেলে স্ত্রীর জন্য মানুষ মরে। আমার সন্তান আত্মহত্যা করে নাই। তাকে খুন করে ফেলা হয়েছে।
প্রশ্ন: কাল থেকে অনেক স্মৃতি নিশ্চয়ই মনে পড়ছে…
নীলা চৌধুরী: সালমান জন্মের পরে সারারাত কষ্ট করেছি। খুবই সুন্দর বাচ্চা, আমাদের পরিবারের মধ্যে সবচাইতে সুন্দর এবং ব্রিলিয়ান্ট বাচ্চা। দুই ভাই একই রকম। কিন্তু তারপরেও সে একটু ভিন্ন ছিল। দেখতে, চলতে, হাঁটতে, রাগে-অনুরাগে আমার একটা কপি ছিল। কোন মেয়ে হলেও মনে হয় এতটা মায়ের অনুকরণে হয় না। আমার ছেলেটা আমার এত ভালোবাসা ছিল।
প্রশ্ন: ১১ জনকে এই হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এক নম্বর আসামি সামিরা খান। আপনি বলছিলেন সালমান-সামিরার বাসায় ইনজেকশন সিরিজ পাওয়া গেছে।
নীলা চৌধুরী: প্রথমে আমি বলি, আপনাদের একটা ভুল হচ্ছে। আমরা কাউকে তখন আসামি করি নাই। আগে বলুন তো, ঝুলন্ত সালমান শাহকে দেখা গেছে? কেউ তো দেখে নাই। এটা তো ডিক্লেয়ার্ড বাই সামিরা হক। এই যে এখন বললেন আমরা আসামি করেছি! আমি আসামি করি নাই বা আমরা আসামি করি নাই। আইন যেটা বলে যে, কারও যদি অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তখন ঘরে যারা থাকে কাজের লোক, বউ, মা বা অন্যান্য মানুষ তাদেরকে কোর্টে নিয়ে যায়, অ্যারেস্ট করে। তখন আসামি হিসেবে তাদের নামই আসে।
সাধারণত যখন কোনো মেয়ের স্বামী মারা যায় সেটা যেহেতু হোক তখন কী করে? তার মাকে জানাবে না, বাবাকে জানাবে না? তারা তো আমাদের কোন খবরই দেয় নাই। ১২টা পর্যন্ত।
প্রশ্ন: পরে আপনারা সেখানে যাওয়ার পর কী দেখলেন?
নীলা চৌধুরী: যখন আমরা রুমে ঢুকলাম, ঢুকে দেখলাম একটা কালো, ৬ ফুট লম্বা হবে, একটা অপরিচিত লোক। যাকে জীবনে আমরা কেউ দেখি নাই। তিনি খাটের কোণায় বসা। আর সালমান শাহ শোয়া, নিথরভাবে শোয়া। একজন সালমানের এক হাতে তেল দিচ্ছে। আমি ধরে নিয়েছি এটা রুবিদের পার্লারের কোন মেয়ে হবে। ঢোকার পরে ওই মেয়েটা হাত ছেড়ে চলে গেল। আর আবুলকে আমার হাজবেন্ড বলল ডাক্তার নিয়ে আয়। আবুল এই যে গেল আর পাওয়া গেল না। আমি একটু বিচলিত হয়ে গেলাম। আমার ছেলেটা পড়ে আছে। প্যান্টের ভেতরে হাত ঢুকায় দেখলাম, না কোনো পায়খানা নেই। তবে তার পায়ের আঙুল স্বাভাবিক ছিল না। দেখলাম ঠোঁটটাও কালো হয়ে গেছে। আমি দেখলাম আর সময় নাই, আমার বাচ্চা মরে যাচ্ছে। পরে ধরাধরি করে তাকে লিফটে নেওয়া চেষ্টা করলাম। এক মহিলাকে দেখলাম, আমাকে এসে বলতেছিল ‘হু আর ইউ? আপনারা কেন নিয়ে যাচ্ছেন?’ আমি আমার ছেলে আমি নিয়ে যাচ্ছি। ‘হু আর ইউ’? তুমি কেন কথা বলো? এই একটা মহিলাই দেখছি ঘরে, আর কাউকে আমি দেখতে পাই নাই।
প্রশ্ন: নতুন একটা মামলা হয়েছে গতকাল (২০ অক্টোবর) রাতেই। সালমান শাহের মামা আপনার ভাই আলমগীর কুমকুম সেটা করেছেন। সেখানেই সামিরাসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চয় আপনি জানেন?
নীলা চৌধুরী: মামা তো আমার পক্ষে কাজ করছে। আমি ভিডিওতে সবসময় ছিলাম, আমি এজাহার পড়েছি। থানা কর্তৃপক্ষ, অ্যাডভোকেট, সবাই ছিল। আপনাদের মতো সাংবাদিক আরও ছিলেন কিছু। আমরা সবাই অনলাইনে ছিলাম। সব দেখে শুনে আমার পক্ষে আমার ভাই সই করেছে। মানে এটা তো আমার নামেই হয়েছে। আমার পক্ষে আমার ভাই আমি তাকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছি।
প্রশ্ন: আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে, যেহেতু পুরনো মামলাটা হত্যামামলায় রূপান্তরের নির্দেশ আদালত দিয়েছে। আরেকটা মামলা করা হলো, এটা আসলে কোন চিন্তাভাবনা থেকে বা এটা আসলে কীভাবে প্রভাব ফেলবে?
নীলা চৌধুরী: ছেলে মারা গেলে যেমন মার্ডার মামলা আমরা করতাম, সেটাই করা হয়েছে এবার। এটা আমরা আগে করতে পারি নাই। আমরা তো আদৌ কোন মামলা করিই নাই। যে মামলাটা করা হয়েছে, ওটা আমার হাজবেন্ডের সই জোর করে নিয়ে ওরাই করে ফেলেছে। পুলিশ করে ফেলছে, যেটা ইউডি মামলা। ওরা বুঝতে পেরেছিল যে আত্মহত্যা করতে হলে এটা করতে হবে। ওরা ওদের মতোই করেছে।
তারা বলছিল যে ‘আমরা পোস্টমর্টেম করব’। পোস্টমর্টেমের সব করেছে ওরা। পোস্টমর্টেমের জন্য একটা সই দিতে হবে, সই করেছেন আমার স্বামী। কিন্তু পরে দেখা গেল এই সই মামলার জন্য। কিসের মামলা? এর মধ্যে তারা জোর করে নিয়ে পোস্টমর্টেমের বাহানা করছে। পোস্টমর্টেম তো করে নাই। তার (সালমান শাহ) কিছু কিছু পার্টস কেটে নিছে যাতে সে আর না বাঁচে।
তারা এফডিসিতে নিয়ে গেল, কার পারমিশনের? আমরা তো পারমিশন দেই নাই। আমাদেরকে তো জিজ্ঞেস করে নাই। তারা জোর করে ওর বাপসহ গাড়ি সহ নিয়ে এফডিতে ঢুকায় দিল। কাকে জিজ্ঞেস করে গেল? আমার কি বাড়িঘর ছিল না? আমরা কি রাস্তাঘাটের মানুষ ছিলাম? আমার তো একটা সামাজিক পরিচিতি আছে। আমি একজন রাজনীতিক। আমার হাসবেন্ড একজন ম্যাজিস্ট্রেট। আমার বাচ্চা আমার বাসায় যাবে। কার হুকুমে, কেন তারা নিয়ে গেল এফডিতে? গাড়ি-টাড়ি তারাই রেডি করল। সিলেট নিয়ে গেল। দাফনও করে ফেলloo। কেন? কারা? কী জন্য? সামিরা প্রথম দিন যখন ইমনকে নিয়ে গেলাম হসপিটালে, সে আমাকে ধরলো না, কিচ্ছু না, সে আমার সাথে কেন হসপিটাল গেল না? তুমি যদি অসুস্থ হও, তোমার বউ যাবে না তোমার সাথে হসপিটালে? তাকে তো পেলামই না। গেল না। সে পরে বলল তাকে আমরা নেই নাই। আমি নাকি লাত্থি মেরে ফেলে গেছি। আল্লাহর কসম, আমি তাকে দেখি নাই, লাত্থি মারবো কেমনে? তখন তো আমি পাগল আমার ছেলেকে নিয়ে।
প্রশ্ন: আরেকটি আপনি খুবই সেনসিটিভ অভিযোগ এইমাত্র বললেন। বলছিলেন যে পোস্টমর্টেম করার সময় সালমান শাহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে রাখা হয়, মানে ‘পার্টস’ বলেছেন আপনি। এই বিষয়টি কি আপনি কখনো আদালতে বা পুলিশি তদন্তে জানিয়েছেন?
নীলা চৌধুরী: এগুলা বহুবার বলা হয়েছে, বহুতবার করা হয়েছে। আদালত তো আমাদের কোন কিছুই শুনে নাই। সিআইডি কাজ করল, তারপরে আমরা পুলিশের সাহায্য চাইলাম। পুলিশ ওরা তো সাফাই গায়।

আমাকে আদালতে কীভাবে অপমান করা হয়েছে? আমি মা, আমার মনে হয় না বিশ্বে কোন মা এত অপমান সহ্য করে ছেলের বিচার চাইবে। একসময় আমার হাজবেন্ডও আমাকে অনেক বকাবকি করছে, মামলা করতে চাইতো না। উনাকে খুব ভয় দেখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। উনি ওই ভয়ে তো মারাই গেল। উনাকে ভয় দেখানো হয়েছে যে আমাদের পরিবারকে উড়িয়ে দেওয়া হবে। উনি অনেক সময় আমাকে অনেক ধাক্কাধাক্কি করেছেন কোর্টে, বাড়িতে। বলতেন, ‘কী দরকার? বন্ধ করো। একটা তো মারা গেছে। এখন তো তুমি আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবা।’ তখন আমার উত্তর ছিল যে, ‘আমরা তো মরেই গেছি। আবার মরবো কী? আমার ছেলে যখন মরে গেছে, আমরা তো মরেই গেছি। আমি এটা শেষ দিকে ছাড়ব।’ আমার ছেলেকে কে খুন করলো? কেন করল? এবং আরেকটা জিনিস আজকে বলি, কাউকে কোনদিন বলি নাই। আমার ছেলে মারা যাওয়ার চার দিন পরে ধরো আমরা সিলেট আসলাম।

আসার পরে আমার বাসায় ফার্স্ট কন্ডোলেন্স লেটার আসছিল মোহাম্মদ বাহারীর, আজিজ মোহাম্মদের বাবা তিনি। সবাই বলাবলি করছে, এই প্রথম কার্ডটা তার আসলো কেন? এত দুঃখ তার কেন? তার সাথে তো আমাদের পারিবারিক কোন যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ও সময় তো আমাদের হুঁশ নাই, ওসব জিনিস তো মাথায় ধরে নাই। এটা আজিজ মোহাম্মদ ভাই তার বাবার নাম দিয়ে পাঠাইছে।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

সালমান শাহর অসমাপ্ত সিনেমায় বন্ধুর কণ্ঠ: ডনের অজানা অবদান প্রকাশ্যে

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর পরও তার কণ্ঠ যেন হারিয়ে যায়নি—পর্দার আড়ালে বন্ধুত্বের বন্ধনেই তা জীবন্ত...