- Advertisement -
| Your Ads Here 100x100 |
|---|
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নে একটি সেতুর নির্মাণ কাজের ৪ বছর মেয়াদ শেষ হয় তবুও সেতু নির্মাণ হয়নি। সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে এক বছরেই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কথা রাখেনি ঠিকাদার। এদিকে সেতুর অভাবে ভাঙ্গামোড় ছড়া পারাপারে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় হাজারো বাসিন্দা। তবে উপজেলা প্রকৌশলী জানিয়েছেন, সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। দ্রুত সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।
স্থানীয় প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড় ছড়ার উপর ৪২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের সেতুর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় প্রকৌশল দপ্তর। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কুড়িগ্রামের ঠিকাদার মোঃ রনি ২০২১ সালের ১৯ এপ্রিল সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। চুক্তি অনুযায়ী পরের বছর ১৮ এপ্রিল সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা। তবে চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি সেতুর কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের ছড়ার উপর নির্মিতব্য সেতুর দুই প্রান্তের দেয়ালের সার্টারে বাঁশ ও গাছের গুড়ির ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। আর সেতুর পাশ দিয়েই ড্রামের ভেলায় চড়ে ঝুঁকি নিয়ে ছড়া পারাপার হচ্ছেন নারী-শিশুসহ শতশত মানুষ। এভাবে ভেলায় চড়ে ছড়া পারাপার হতে গিয়ে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। জীবন জীবিকাতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ওই এলাকার মোঃ হাসেম আলী, মোঃ এমদাদুল হক ও মোঃ আনছার আলী জানান, ছড়াটির এপারে তাদের বসতবাড়ি। আর ওপারে তাদের সমস্ত ফসলি জমি। জমিতে আবাদের প্রয়োজনে বারবার ছড়া পারাপার হতে হয়। ছোট ভেলায় পারাপারে ভোগান্তি তাদের নিত্যসঙ্গী। খেতের ফসল পাকলে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। ছোট্ট একটা ভেলায় করে সবার ফসল বাড়িতে আনার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যায়। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লাগে। তারা আরও জানান, সেতু না থাকায় এ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তারা দ্রুত সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোঃ আবু তালেব সরকার জানান, সেতুর অভাবে এ অঞ্চলের প্রায় বিশ হাজার মানুষ ছড়া পারাপারে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিরূপ প্রভাব পড়েছে স্থানীয় মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও কৃষিক্ষেত্রে। জনভোগান্তি নিরসনে সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙামোড় ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, ” সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও মানুষের পারাপারের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ড্রামের একটি ভেলা তৈরি করে দেই। কিন্তু সেটিও যথেষ্ট নয়। ফলে স্থানীয়দের ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে চার বছর আগে। আমি কয়েকবার কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারের লোকজনের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি বরং উল্টো আমার উপর চড়াওও হয়েছে। এদিকে ছড়া পারাপার হতে গিয়ে এলাকার লোকজন প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। এভাবে আর কতদিন চলবে? আমি আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর একটা বিহিত করবেন।”
ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
নির্মাণাধীন সেতুটির ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, “আমি প্রায় দু’ বছর হল এ উপজেলায় এসেছি। যোগদানের পর থেকে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ শেষ করতে তৎপর আছি। ঠিকাদারও কাজ শেষ করতে যথেষ্ট আগ্রহী। তবে ওখানকার পানির গভীরতার কারণে সেতুর মাঝখানের পিলারের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি দ্রুত সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।”

