বাংলাদেশের সরকারি ঋণ ইতিহাসে প্রথমবার ২১ ট্রিলিয়ন (২১ লাখ কোটি) টাকার অতিক্রম করেছে। অর্থ বিভাগের সর্বশেষ ঋণ বুলেটিন অনুযায়ী, জুনের শেষে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২১.৪৪ ট্রিলিয়ন টাকায়, যা আগের বছরের ১৮.৮৯ ট্রিলিয়নের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মোট ঋণের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৯.৪৯ ট্রিলিয়ন টাকা, যা ৪৪.২৭ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ঋণও বেড়ে ১১.৯৫ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদেশিক ঋণের বৃদ্ধির হার অভ্যন্তরীণ ঋণের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঋণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে মহামারির পর উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো থেকে পাওয়া সহায়তা এবং বড় প্রকল্প যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা মেট্রো রেল ও মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় উল্লেখ করেছেন।
সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “রাজস্ব আহরণ ধীরগতির কারণে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে, ফলে ঋণের চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বৈদেশিক ঋণে কঠোর শর্ত এবং উচ্চ সুদের কারণে আর্থিক ঝুঁকি বেড়েছে।”
গত অর্থবছরে সরকার সুদ হিসেবে ১,৩২৪৬০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক ঋণের সুদ বেড়েছে ২১ শতাংশ, এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ১৬ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদে ঋণ টেকসই রাখার জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধ ঋণ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন প্রকল্পের কঠোর যাচাই, রাজস্ব আহরণের ত্বরান্বিত ব্যবস্থা ও রপ্তানি আয় সম্প্রসারণে মনোযোগ জরুরি।
এই প্রেক্ষাপটে সরকার একটি সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় (ডিএমও) স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি দেশীয় ঋণ তত্ত্বাবধান, ঋণগ্রহণ পরিকল্পনা, ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং ঋণ ডাটাবেস একীভূত করবে। অর্থ বিভাগের মতে, ডিএমও কার্যকর হলে অর্থায়ন খরচ কমবে, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী হবে।