17 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫

আ.লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে নির্বাচন প্রতিহত করা হবে: রায়ের আগে রয়টার্সকে জয়

জনপ্রিয়
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করবেন দলটির সমর্থকেরা। তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রতিবাদ সহিংস রূপ নিতে পারে।
রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় এ মন্তব্য করেন। ঠিক তার এক দিন পরই—আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর)—ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে। রায় সরাসরি টেলিভিশনে প্রচার এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় প্রদর্শনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
হাসিনার বিরুদ্ধে দণ্ডের আশঙ্কা
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে অনুপস্থিতিতেই দোষী সাব্যস্ত করা হতে পারে।
হাসিনা অবশ্য অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করে বিচারকে “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফসল” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সর্বোচ্চ ১,৪০০ জন নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়—যা ১৯৭১ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত।
“সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড হবে” — জয়
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করছেন। জয় জানান, ভারত তাকে “রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদা” দিয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছে।
ওয়াশিংটনে বসবাসকারী জয় বলেন,
“আমরা জানি রায় কী হবে। তারা টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করছে। তারা তাকে দোষী ঘোষণা করবে এবং সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড দেবে।”
তার বক্তব্য—
“আমার মায়ের কিছুই হবে না। তিনি ভারতে নিরাপদ। ভারত তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়েছে।”
অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, বিচার ‘সম্পূর্ণ স্বচ্ছ’ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।
নির্বাচন প্রতিহত করার হুমকি
মে মাসে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনায়’ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে নির্বাচন থামানোর ঘোষণা দিয়েছেন জয়।
তিনি বলেন—
“আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেবো না। প্রতিবাদ আরও তীব্র হবে, যা করতে হবে করব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব থাকলে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সহিংসতা-সংঘাত অনিবার্য।”
অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র অবশ্য জানান—
“নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। নির্বাসিত নেতাদের উসকানি আমরা দায়িত্বজ্ঞানহীন মনে করি।”
ঢাকায় ককটেল বিস্ফোরণ, মোতায়েন ৪০০+ বিজিবি
রায় ঘোষণার আগেই ঢাকায় উত্তেজনা বাড়ছে। গত কয়েক দিনে রাজধানীতে বহু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শুধু ১২ নভেম্বরেই অন্তত ৩২টি বিস্ফোরণ হয় এবং কয়েক ডজন বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নাশকতার অভিযোগে আওয়ামী লীগ কর্মীদের আটক করছে পুলিশ।
নিরাপত্তা জোরদারে চেকপোস্ট বৃদ্ধি, জনসমাবেশে সীমাবদ্ধতা এবং ৪০০–র বেশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
সরকার জানিয়েছে—
“জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান অগ্রাধিকার।”
“আমরা লড়াই চালিয়ে যাব” — জয়
জয় জানান, তিনি এবং শেখ হাসিনা দেশে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন, তবে অন্তর্বর্তী সরকার বা বিএনপির সঙ্গে নয়।
তার ভাষায়—
“হরতাল, বিক্ষোভ এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলো আরও বাড়বে।”
হাসিনার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ও অভিযোগ
১৫ বছরের শাসনে অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য প্রশংসা পেলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভিন্নমত দমন ও নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসেন তিনি।
এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টো। জয় বলেন—
“তিনি (হাসিনা) হতাশ, ক্ষুব্ধ এবং আমরা যেকোনো পথে পাল্টা লড়াই করতে প্রস্তুত।”
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে হত্যাকাণ্ড: ঘটনার ৬০ ঘণ্টা পর গৃহকর্মী আয়েশা ও তার স্বামী গ্রেপ্তার

ঢাকার মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল (১৫) হত্যাকাণ্ডের প্রায় আড়াই দিন পর গৃহকর্মী...