আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডাদেশকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। রায় ঘোষণার পর সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দলগুলোর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সংবাদ সম্মেলনগুলোতে ছিল তীব্র প্রতিক্রিয়া।
রায় ঘোষণার পর রাতের জরুরি বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, দীর্ঘ সময় ধরে চলা গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের পর এ রায়কে তারা ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখছেন।
তিনি বলেন, “১৬ বছরের আন্দোলন ও ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে।”
স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেন—স্বৈরশাসনের পতন অবশ্যম্ভাবী; একসময় সবাইকে আইনের মুখোমুখি হতেই হয়।
মগবাজারে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রায়টি “স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকমানের” হয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে আশ্রয় দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে; তাই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, রায় কার্যকর হতে হবে আগামী এক মাসের মধ্যেই। পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অভিযুক্ত সব ব্যক্তির মামলাও দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানান তিনি।
এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনটির আমির ও মহাসচিব জানান—রায় ন্যায়বিচারের বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে এবং পিলখানা ও শাপলা চত্বরের ঘটনাসহ অন্যান্য মামলার বিচার দ্রুত শুরু করতে হবে।
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি রচনায় এই রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
কর্নেল অলি আহমদ দাবি করেন—রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার প্রতিহিংসা নয়; বরং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার
টিএসসি চত্বরে বড় পর্দায় রায় দেখার পর শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। ডাকসুর নেতারা এতে অংশ নেন। ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবি জানান।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি রায়কে “বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নজির” বলে মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুলের মেয়ে শামারুহ মির্জা সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ন্যায়বিচারের সূচনা হয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনকর্মী ও দলীয় নেতাকর্মীরা রায়কে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। কোথাও কোথাও শোকরানা নামাজও অনুষ্ঠিত হয়।