অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথ সুগম করা—এমন মন্তব্য এসেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছ থেকে। তাদের মতে, নির্বাচন মাত্র কয়েক মাস দূরে; তাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তাবোধ পুনরুদ্ধার—এই তিন বিষয়ে সরকারের মনোযোগই এখন সবচেয়ে জরুরি।
কিন্তু সমালোচকদের অভিযোগ, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তুতির চেয়ে সরকার বেশি মনোযোগ দিচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ও কৌশলগত চুক্তি সম্পাদনে—যা একটি অস্থায়ী সরকারের এখতিয়ার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।
‘অস্থায়ী সরকারের হাতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি অনৈতিক’
বিশেষজ্ঞদের দাবি, জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বড় চুক্তি করার অধিকার একটি পূর্ণ মেয়াদি নির্বাচিত সরকারের থাকে। সেখানে শুধু অনুমোদনই নয়, সংসদীয় আলোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত।
তাদের প্রশ্ন—
-
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে হঠাৎ এত তাড়াহুড়া কেন?
-
চুক্তিগুলো গোপনীয়ভাবে করা হচ্ছে কেন?
-
জনগণ, বিশেষজ্ঞ বা রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ কেন উপেক্ষা করা হচ্ছে?
সমালোচকদের আশঙ্কা, এই চুক্তিগুলোর পেছনে বিদেশি কোম্পানির লবিস্টদের প্রভাব থাকতে পারে, যারা অস্বচ্ছভাবে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। এতে ভবিষ্যৎ সরকারগুলো বাধাগ্রস্ত হবে, কিন্তু তার দায় বহন করতে হবে বহু বছর ধরে দেশের সাধারণ মানুষকে।
জাতীয় সক্ষমতার বদলে বিদেশি কোম্পানিনির্ভরতা বাড়ছে
বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিদেশি কোম্পানিগুলো শ্রেষ্ঠ—এই প্রচার চালিয়ে দেশের সক্ষমতার প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে অবিশ্বাস তৈরি করা হচ্ছে। এতে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়।
সমালোচকরা স্মরণ করান—
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও দুর্নীতিমুক্ত নয়, কিন্তু অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই অন্যান্য দেশ তাদের শক্তি গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশেরও সেই পথেই অগ্রসর হওয়া উচিত।
গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশার সঙ্গে ‘বেমানান কর্মকাণ্ড’
তারা মনে করিয়ে দেন, গণ–অভ্যুত্থানে জনগণ যে স্বচ্ছতা, নীতি ও জবাবদিহির প্রত্যাশা করেছিল, বর্তমান কার্যক্রম তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়—যারা আলোচনায় রয়েছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে আছে।
‘চুক্তির তাড়াহুড়ার পেছনে অন্য উদ্দেশ্য’
সমালোচকদের মতে, সরকারি তৎপরতার ধরন দেখে মনে হচ্ছে—
-
জাতীয় স্বার্থের চেয়ে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে
-
চুক্তির দ্রুততা ও গোপনীয়তা স্বচ্ছতার অভাব নির্দেশ করছে
-
মাশুল বৃদ্ধি ও অস্বচ্ছ শর্তে দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়ছে

