বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বন্দরগুলো দীর্ঘদিন ধরে রক্তসঞ্চালনের ভূমিকা পালন করছে। রপ্তানি–আমদানির প্রবাহ নির্বিঘ্ন রাখা, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যবসার ব্যয় কমানোর মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের প্রধান বন্দরগুলো শিল্প-বাণিজ্যের মেরুদণ্ডে পরিণত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এসব কৌশলগত স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোম্পানির হাতে দ্রুত হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা ও বন্দর-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মতামত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে—চট্টগ্রাম বন্দরের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালের মধ্যে পাঁচটির পরিচালনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যাচ্ছে বা যাওয়ার অপেক্ষায়। এতে জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও ভবিষ্যৎ রাজস্ব কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গোপন চুক্তি ও দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ
বন্দর কর্তৃপক্ষের বাইরে গিয়ে ৩০ বছর মেয়াদি কয়েকটি চুক্তি সম্প্রতি তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়েছে। এসব চুক্তির ফলে সংশ্লিষ্ট টার্মিনালগুলোতে
-
ফি ও মাশুল
-
অপারেশনাল নীতি
-
এবং ব্যবহার বিধি
নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা বিদেশি অপারেটরদের হাতে চলে যাচ্ছে।
শ্রমিক সংগঠন থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদদের একাংশ জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ এবং জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
দেশি অপারেশনের বাইরে যাচ্ছে পাঁচ টার্মিনাল
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজে পরিচালনা করছে
-
জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) এবং
-
চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি)
—এই দুটি স্থাপনা। কিন্তু বাকি পাঁচটি টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে উঠছে অথবা চুক্তির শেষ সময়ে রয়েছে।
কে কোন টার্মিনাল পাচ্ছে?
-
১৭ নভেম্বর লালদিয়ার চর কনটেইনার টার্মিনালের অপারেশন চালানোর জন্য চুক্তি হয়েছে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস–এর সঙ্গে, যা মায়ারস্ক গ্রুপের মালিকানাধীন।
-
একই দিনে পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএ–কে।
-
এর বাইরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বর্তমানে পরিচালনা করছে নৌবাহিনী পরিচালিত চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড, যারা বন্দরের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৪৪ শতাংশ সম্পন্ন করছে।
উদ্বেগ বাড়ছে বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে
বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের আশঙ্কা—অপারেশনের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি অপারেটরদের হাতে গেলে সহজেই
-
মাশুল বৃদ্ধি,
-
সেবা সীমিতকরণ,
-
এবং বাণিজ্যিক জটিলতা
তৈরি হতে পারে, যা দেশের বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

