ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার গভীর রাতে মাদারীপুরের একটি গানের আসর থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে তার ভক্ত–শিষ্যরা। তবে পুলিশের দাবি—এটি করা হয়েছে “নিরাপত্তাজনিত কারণে”।
অভিযোগ ও পটভূমি
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরা এলাকায় ৪ নভেম্বর এক পালাগানের অনুষ্ঠানে আবুল সরকার সংগীত পরিবেশন করেন। সেই পরিবেশনার একটি অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন অভিযোগ তোলে—ভিডিওতে তিনি “ইসলামী বিশ্বাসকে অপমান করে অশালীন ও কটূক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন” এবং “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিয়েছেন।”
এসব অভিযোগ তুলে স্থানীয় আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
এর প্রেক্ষিতে আবুল সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও উসকানিমূলক আচরণের অভিযোগে মামলা হয়। বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কয়েকজনকে “আবুল বয়াতির ফাঁসি চাই” লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায়।
ভক্তদের অভিযোগ
অন্যদিকে আবুল সরকারের শিষ্য–অনুরাগীদের দাবি, গানের নির্দিষ্ট অংশ কেটে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, এবং তার সম্পূর্ণ পরিবেশনা প্রকাশ করা হলে অভিযোগের ভিত্তি দাঁড়াবে না। তারা বলছেন, অভিযোগটি রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে উসকানিমূলক এবং একজন শিল্পীর শিল্পীসত্তাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিশিষ্টজনদের উদ্বেগ
সংস্কৃতি–গবেষক ও সাধনার ধারার সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও শিল্পী–সংস্কৃতির ওপর দমনমূলক আচরণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, যা পূর্ববর্তী সরকারের সময় দেখা চর্চারই ধারাবাহিকতা। তাদের মতে, মাজার ভাঙা, গানবাজনার আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া এবং শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা—সবকিছুই সৃজনশীল সংস্কৃতিচর্চার জন্য নেতিবাচক বার্তা বহন করে।