| Your Ads Here 100x100 |
|---|
গতকাল শুক্রবার সকালেই যে শক্তিশালী কম্পন বাংলাদেশ কাঁপিয়ে যায়, সাম্প্রতিক সময়ের প্রেক্ষাপটে তা ছিল সবচেয়ে তীব্র। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, বাংলাদেশের উত্তরদিকে ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল এবং পূর্বদিকে ইন্ডিয়ান ও বার্মিজ প্লেটের মিলনরেখা—এই দুই সক্রিয় টেকটনিক অঞ্চলের মাঝামাঝি অবস্থানেই পড়ে বাংলাদেশ। এসব প্লেটের ধীরগতির নড়াচড়ায় দেশের ভূখণ্ড ক্রমাগত সরে যাচ্ছে, আর ভূত্বকের ভেতরে জমছে বিপুল শক্তি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে শক্তি ‘লকড’ অবস্থায় ছিল; এখন সেই শক্তি ‘আনলকিং’-এর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফলে সামনের সময়ে আরও কিছু গ্যাপ বা ফাটলের দিকে দিয়ে ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
ঢাকার আশপাশে কয়েক দশকের মধ্যে এত কাছ থেকে বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়নি। দেশের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলো ছিল তুলনামূলক হালকা মাত্রার। তবে ঐতিহাসিক রেকর্ড বলছে, বিগত তিন শতকে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় একাধিক বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়েছে।
১৭৬২ সালের ভূমিকম্প—মাত্রা ৮.৫—টেকনাফ থেকে মিয়ানমার উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ফল্ট লাইনে সৃষ্ট হয়েছিল। এতে সেন্টমার্টিন দ্বীপ প্রায় তিন মিটার ওপরে উঠে আসে, সীতাকুণ্ডে কাদা-বালুর উদ্গিরণ ঘটে, আর বঙ্গোপসাগরে সুনামিন্যাপ্ত ঢেউ বহু ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নেয়। ব্রহ্মপুত্র নদও বদলে ফেলে তার গতিপথ।
এ ছাড়া ১৮৬৯ সালের ‘কাচার ভূমিকম্প’, যার মাত্রা ছিল ৭.৫, উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের জৈন্তা পাহাড়ের উত্তরের শিলচড়ে। এতে শিলচড়, নওগাং ও ইম্ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
১৮৮৫ সালের মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া অঞ্চলকেন্দ্রিক ৭ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রাণহানি ঘটায় এবং ভারতের কয়েকটি রাজ্যেও এর প্রভাব পড়ে।
১৮৯৭ সালের বিখ্যাত ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক’—রিখটার স্কেলে ৮.৭—বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলোর একটি। উৎপত্তিস্থল ছিল মেঘালয়ের শিলং। দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়; সিলেটেই প্রাণহানি পাঁচ শতাধিক। দেশের বহু স্থাপনায় ফাটল ও ধস দেখা দেয়।
১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলের বালিছড়া এলাকায় ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প ব্যাপক ক্ষতি করে। পরে চট্টগ্রাম ও মহেশখালীতে আরও দুটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণহানি ঘটে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক ঘন ঘন ক্ষুদ্র কম্পনগুলো আসলে ভূত্বকের ভেতরে আটকে থাকা বড় শক্তির বেরিয়ে আসার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইন্ডিয়ান–বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে জমে থাকা শক্তি যদি হঠাৎ মুক্ত হয়, তাহলে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার বড় ধরনের ভূমিকম্পও ঘটতে পারে। সময়টা অনিশ্চিত—এটি কালও হতে পারে, আবার ৫০ বছর পরও হতে পারে—কিন্তু এমন ঘটনা ঘটলে তা হবে অত্যন্ত বিস্তৃত ও ধ্বংসাত্মক।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, অবকাঠামো রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়; তাই ভূমিকম্প প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত মহড়া এখন সবচেয়ে জরুরি। ভূমিকম্পের মুহূর্তে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার মতো অভ্যাস মানুষের মধ্যেই গড়ে তুলতে হবে।

