| Your Ads Here 100x100 |
|---|
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সম্ভাবনাময় নৌপথ ব্রহ্মপুত্র নদের উপর চিলমারী থেকে রৌমারী রুটে ফেরি চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গত দুই বছরে ফেরি চলেছে মাত্র ৪০৫ দিন। বাকি ৩৬৯ দিন ফেরি বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রী ও চালকদের। ফলে বিকল্প পথে ঘুরে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন পরিবহন চালকরা। এতে সময়, খরচ ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক, ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিকরা।
ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সংকট, অন্যদিকে ঘাট ব্যবস্থাপনার স্থবিরতায় ফেরি সার্ভিস কার্যকরভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না। বারবার ড্রেজিং করেও লাভ হচ্ছে না। উজানের ঢলে পলি পড়ে দ্রুত চর জেগে উঠছে, আর বর্ষাকালে দেখা দিচ্ছে ভাঙন।
কুড়িগ্রাম বিআইডব্লিউটিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের পর থেকে এই রুটে কুঞ্জলতা ও বেগম সুফিয়া কামাল নামে দুটি ফেরি যুক্ত করা হয়। পরে বেগম সুফিয়া কামাল ফেরি সরিয়ে কদম নামে আরেকটি ফেরিঘাটে যুক্ত করা হয়। এরপর থেকে ফেরি কুঞ্জলতা ও কদম নিয়মিত পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি পারাপার করছে।
চিলমারী ঘাটের লিপিবদ্ধ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ফেরি চালু হওয়ার পর ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০৪ দিনে ফেরি চলেছে ৯৭ দিন। এই সময়ে গাড়ি পারাপার হয়েছে ২ হাজার ৮৮৫টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ বছরে ফেরি চলেছে ২৪১ দিন। এই সময়ে গাড়ি পারাপার হয়েছে ৬ হাজার ৫৬২টি। এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২১৯ দিনের মধ্যে ফেরি চলেছে মাত্র ৬৭ দিন। এই সময়ে গাড়ি পারাপার হয়েছে মাত্র ২ হাজার ২৫০টি।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফেরি চালুর বছরে ১০৪ দিনের মধ্যে মাত্র ৭ দিন বন্ধ ছিল। কিন্তু ২০২৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে বিড়ম্বনা। এ বছরে ফেরি চলেছে ২৪০ দিন, বন্ধ ছিল ১২৬ দিন। তবে এ বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে ২০২৫ সালে। এ বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফেরি চলেছে ২১৯ দিনের মধ্যে মাত্র ৬৭ দিন।
কুড়িগ্রাম বিআইডব্লিউটিএ’র চিলমারী ফেরিঘাটের ম্যানেজার প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ‘ফেরি নিয়মিত চালু রাখতে না পারলে তো বিড়ম্বনা রয়েছে। তবে আমরা বন্ধের আগের দিন পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর মটর মালিক সমিতিকে অবহিত করি।’
বাংলাদেশ রেল, নৌ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নাহিদ হাসান বলেন, চিলমারী ঘাটের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটকে সচল রাখতে হলে সাময়িক সমাধান নয়, দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ।
কুড়িগ্রাম মটর শ্রমিক ইউনিয়নের চিলমারী উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া বলেন, চিলমারী ফেরিঘাট অচল থাকায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহন উভয় খাতেই বড় ক্ষতি হচ্ছে। বিকল্প পথে ঘুরে যেতে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ছে।
কুড়িগ্রাম বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, চিলমারী ফেরি পথ প্রায় ২৭ কি.মি, বাংলাদেশে এত বড় পথ আর কোথাও নেই। চারটি ড্রেজার ফেরি রুটটি চালু রাখতে কাজ করছে। ড্রেজার বাড়ানো গেলে রুট নিয়মিত চালু রাখা যাবে।

