| Your Ads Here 100x100 |
|---|
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামসহ পার্বত্য ও সীমান্তঘেঁষা উত্তরের বিস্তীর্ণ জনপদ। বুধবার রাত থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা শীতপ্রবাহ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। কুড়িগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকায় সকাল হলেও সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় যানবাহনগুলোকে বাধ্য হয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। ফলে কর্মজীবী মানুষের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় কুড়িগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, ঠান্ডার তীব্রতা এখনো বাড়তে পারে এবং কুড়িগ্রাম অঞ্চলে সামান্য থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে–খাওয়া, দিনমজুর, রিকশাচালক, মাঠে কাজ করা কৃষকসহ নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। সকাল-বিকেল শীতের দাপট বেশি থাকায় তাদের জীবিকা নির্বাহে চরম বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে মোটা কাপড়, চাদর, কম্বল জড়িয়ে ঘর থেকে বের হলেও কাজের অভাবে উপার্জন কমে গেছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দিনমজুর মোঃ আজিজ মিয়া (৬০) বলেন, কুয়াশা আর ঠান্ডায় বাড়িত থাকি বের হওয়া যায় না। কিন্তু কী করব? কাম না করলে তো খাওয়া লাগবে। ঠান্ডায় হাতে-পায়ে ব্যথা করে, তাও বের হইছি।
কুড়িগ্রাম জেলা সদর উপজেলার পৌর শহরের রিকশাচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম (৫০) জানান, শীতের কারণে রাস্তায় লোকজন কম। ফলে রিকশা নিয়ে বের হলেও ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তার ভাষায়, ঠান্ডায় বাড়িত থাকলে তো সংসার চলবে না। ভাড়া নাই, মানুষ রাস্তায় নাই। কীভাবে চলবো চিন্তায় আছি।
তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা। কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়াজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বিশেষ করে চরাঞ্চল, নদীতীরবর্তী নিম্নভূমি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে শীতজনিত রোগের ঝুঁকি আরও বেশি।
এদিকে, কুড়িগ্রাম জেলার কয়েকটি এলাকায় শীত নিবারণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ চাদর, কম্বল এবং পোশাক বিতরণ করছে। তবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ সহায়তা যথেষ্ট নয় বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানিয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলার সদর, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, চিলমারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারীসহ বেশ কিছু এলাকায় জমে থাকা কুয়াশার কারণে যোগাযোগব্যবস্থা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধীরগতি হয়ে পড়ছে। বাস, ট্রাক, থ্রি–হুইলারসহ বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা জানিয়েছেন, দৃশ্যমানতা ২০–৩০ মিটারের নিচে নেমে আসায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সকালবেলা তারা যানবাহন চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
বিভিন্ন চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন জানান, শীতের তীব্রতা নদীর পানি ঘেঁষা এলাকায় আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। অনেকেই রাতে আগুন জ্বালিয়ে গরম নিচ্ছেন। কেউ কেউ পুরোনো কাপড় ভিজে যাওয়ায় শুকাতে না পারায় ঠান্ডা আরও অনুভব করছেন।
এ অবস্থায় কুড়িগ্রাম জেলার স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে শীতবস্ত্র বিতরণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলেন, দীর্ঘস্থায়ী শীতপ্রবাহ বয়ে গেলে দরিদ্র মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

