Your Ads Here 100x100 |
---|
বাংলাদেশের রাজধানীতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড ছুঁড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয়। সাতই মার্চ বায়তুল মোকাররম থেকে ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে সংগঠনটি শুরু করে, যার পোস্টার ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।
শুক্রবার, জুমার নামাজের পর, মসজিদের দক্ষিণ গেট এলাকা থেকে শুরু করা মিছিলে খিলাফত ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষে স্লোগান প্রদান করা হয়। ইতিমধ্যে ওই এলাকায় পুলিশ সদস্যদের সতর্ক উপস্থিতি থাকায়, মিছিলটি পল্টন মোড় হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে এগিয়ে চলে। সেই সময়ে পুলিশ থামানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে গিয়ে এক পর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও সাউন্ডগ্রেনেড ছুঁড়ে মিছিলের উপর লাঠিচার্জ পরিচালনা করে। এর ফলে, মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে; অনেকেই আশেপাশের গলিতে আশ্রয় নেয়, আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকজনকে আটক করে। বর্তমানে, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
২০০৯ সালের ২২ই অক্টোবর, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রেসনোট জারি করে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, যেখানে সংগঠনটিকে ‘শান্তি শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গণঅভ্যুত্থানের পর, সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর যদি সভা, সমাবেশ ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে তবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ। সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সংগঠনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার বা লিফলেট বিতরণসহ সকল প্রচারণা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া, একই রাতে সংগঠনটির তিন সদস্যকে গ্রেফতার করার কথাও জানানো হয়।

আদর্শগতভাবে, হিযবুত তাহরীরের লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে ‘ইসলামি খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করা। তারা গণতন্ত্র বিরোধী ও ‘কোরআন-সুন্নাহ’র আলোকে সংবিধান চাওয়া দাবি করে; এ বিষয়ের ওপর সংগঠনটির একটি খসড়া সংবিধানও রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে, বিশ্বের কিছু আরব দেশ, জার্মানি, তুরস্ক ও পাকিস্তানে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেও যুক্তরাজ্যে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়। সংগঠনটির বক্তব্য অনুসারে, কিছু দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা সহ অনেক দেশে তারা বৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশে ২০০৯ সালের প্রেসনোটে সংগঠনটিকে ‘শান্তি শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো।
গণঅভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে, প্রকাশ্য রাজনীতিতে প্রবেশের চেষ্টা করে হিযবুত তাহরীর। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুদিন পর, ৭ই আগস্ট বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে সংগঠনের কর্মীরা সভা করে। সাদা কালো কাপড়ে ইসলামের কলেমা লেখা পতাকা ও খিলাফতের দাবিসহ ব্যানার-লিফলেট নিয়ে তারা উপস্থিত ছিল। একই দিনে, সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটি সভাও আয়োজিত করে। সরকার পতনের পর, হিযবুত তাহরীর ঢাকার ভিতরে ও বাইরে বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, মিছিল ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। অগাস্ট মাসে বন্যার সময়, ‘ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ’ শিরোনামে তাদের ব্যানারে ঢাকায় বৃহৎ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে, ৯ই সেপ্টেম্বর ঢাকার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি তুলে ধরে।
।